৫৫/বি (৩য় তলা), পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০

ফোন : ০২-৯৫৬৭১৩০, ফ্যাক্স : ০২-৭১৬১০৮০

ইসলাম ও দেশপ্রেমের চেয়ে সরকারের ভারতপ্রেম অনেক বেশি – ময়মনসিংহ বিভাগীয় সমাবেশ

  • হোম
  • জাতীয় কর্মসূচি
  • ইসলাম ও দেশপ্রেমের চেয়ে সরকারের ভারতপ্রেম অনেক বেশি – ময়মনসিংহ বিভাগীয় সমাবেশ

🔷 ইসলাম ও দেশপ্রেমের চেয়ে সরকারের ভারতপ্রেম অনেক বেশি
🔷 নতজানু পররাষ্ট্রনীতি দুর্নীতিযুক্ত পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনা ও দুর্বল দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা দেশময় মানবিক বিপর্যয় তৈরি করেছে

– ময়মনসিংহ বিভাগীয় সমাবেশে পীর সাহেব চরমোনাই

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর আমীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম পীর সাহেব চরমোনাই বলেছেন, “বন্যা প্রাকৃতিক দুর্যোগ হলেও সেই দুর্যোগকে বাড়িয়ে তোলে সরকারের নতজানু পররাষ্ট্রনীতি, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় অদক্ষতা। সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় আজকে যে মানবিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে তার জন্য ক্ষমতাসীন সরকার দায় এড়াতে পারে না।”

২০ জুন ২০২২ সোমবার, বাদ জোহর ময়মনসিংহ শহরের ঐতিহাসিক আঞ্জুমান ঈদগাহ মাঠে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর ময়মনসিংহ বিভাগের উদ্যোগে “ভারতে মহানবী হযরত মুহাম্মদ সা. ও উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা রা.-এর শানে অবমাননাকর বক্তব্যের প্রতিবাদ, কথিত ‘গণকমিশন’ কর্তৃক দেশের সম্মানিত ১১৬ জন আলেম ও ১০০০ মাদরাসার বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন অভিযোগ এবং ইসলাম ও দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র-চক্রান্তের প্রতিবাদ, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদ, শিক্ষা-সিলেবাসে ধর্মীয় শিক্ষার সংকোচন বন্ধ, ইসলাম, দেশ ও মানবতাবিরোধী মদের বিধিমালা বাতিল, স্বাধীনতার মূল লক্ষ্য- সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা এবং দুর্নীতি ও সন্ত্রাসমুক্ত কল্যাণরাষ্ট্র গঠনে ইসলামী হুকুমত কায়েমের লক্ষ্যে” অনুষ্ঠিত বিশাল বিভাগীয় সমাবেশে প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন।

দলের তথ্য বিষয়ক উপদেষ্টা প্রখ্যাত সাংবাদিক ও শিক্ষাবিদ মাওলানা উবায়দুর রহমান খান নদভীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য প্রিন্সিপাল মাওলানা সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল-মাদানী, মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ইউনুছ আহমাদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন ও অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান, যুগ্ম মহাসচিব ইঞ্জিনিয়ার আশরাফুল আলম, সহকারী মহাসচিব মাওলানা শেখ ফজলে বারী মাসউদ, মাওলানা লোকমান হোসাইন জাফরী, মাওলানা নেছার উদ্দিন, জি.এম. রুহুল আমীন, মাওলানা কেফায়েতুল্লাহ কাশফী, আলহাজ্ব আব্দুর রহমান, ছাত্রনেতা শরিফুল ইসলাম রিয়াদসহ ময়মনসিংহ বিভাগের জেলা নেতৃবৃন্দ। প্রচন্ড বৈরী আবহাওয়ার মাঝেও বিভাগের আওতাধীন জেলা ও থানা শাখাগুলো মিছিলসহ সমাবেশে যোগদান করেন।

পীর সাহেব চরমোনাই আরো বলেন, “প্রাকৃতিক কারণেই ভারত ও বাংলাদেশের স্বার্থ ওতপ্রোত সম্পর্কিত। ফলে উভয় দেশের নদী, বাঁধসহ পানি ব্যবস্থাপনা বন্ধুত্বপূর্ণ ও সহযোগিতাপূর্ণ হওয়া উচিৎ ছিলো। কিন্তু দুঃখজনক বাস্তবতা হলো, বাংলাদেশের সরকারগুলো ভারতের সাথে বহু সম্পর্ক উন্নয়ন করলেও ভারতের পানি নীতি বরাবরই বাংলাদেশের স্বার্থের বিরুদ্ধে গেছে। সরকারগুলোও তার কোন প্রতিকার করতে পারেনি।”

কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে অনুষ্ঠিত ময়মনসিংহ বিভাগীয় সমাবেশে পীর সাহেব চরমোনাই বলেন, “ভৌগলিক কারণেই বাংলাদেশ দুর্যোগপ্রবণ। সেজন্যই দুর্যোগ ব্যবস্থাপনাকে প্রধান গুরুত্ব দিয়ে নীতি প্রনয়ণ করা ও তার যথাযথ বাস্তবায়ন করা উচিৎ ছিলো সরকারগুলোর। কিন্তু সিলেটের মানবিক বিপর্যয় চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে যে, বাংলাদেশের সরকার এক্ষেত্রে চূড়ান্ত ব্যর্থ।”

পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়কে উদ্দেশ্য করে পীর সাহেব চরমোনাই বলেন, “দেশের নদ-নদীগুলো ভরাট হয়ে যাচ্ছে। নাব্যতা হারিয়েছে দেশের প্রায় সকল নদী। বন্যা নিয়ন্ত্রণে বাঁধগুলো ইদুরে খেয়ে ফেলেছে। হাওরে উন্নয়নের নামে পানির স্বাভাবিক গতিপথ বাধাগ্রস্থ করা হয়েছে। অথচ পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের কোন বিকার নেই! বছরের পর বছর তাদের দুর্নীতি এবং অযোগ্যতার কারণে পানি সম্পদ আজকে বিপদে পরিণত হয়েছে।”
পীর সাহেব চরমোনাই বলেন, “সরকারের কাছে দেশ ও ইসলামের চেয়েও ভারতপ্রেম বেশি। কেবলমাত্র ভারতপ্রীতির কারণে রাসূল সা.-এর বিরুদ্ধে কটুক্তি করার পরও বৃহত্তর ইসলামপ্রিয় জনতার পক্ষে সরকার অবস্থান নিতে পারেনি। সরকারকে মনে রাখতে হবে- আপনার দুর্দিনে ভারত আপনাকে রক্ষা করতে পারবে না। আল্লাহর গজব থেকে বাঁচতে চাইলে অবশ্যই নবীপ্রেমের দৃষ্টান্ত সরকার দেখাতে হবে।”

তিনি বলেন, “শুধু বন্যা পরিস্থিতি না বরং দেশের প্রতিটি খাতই এমন বিপদজনক অবস্থায় রয়েছে। কোনো দিক থেকে সামান্য কোনো ঝাঁকুনি এলেই দেশ ও জনতার ওপর বিপর্যয় নেমে আসবে। এজন্য দায়ী সরকারগুলোর চরিত্র। এই সরকারগুলো জনতার সেবক নয়।”

পীর সাহেব বলেন, “এই সরকার দেশ ও জনতার জন্য কতটা ক্ষতিকর, তা তাদের কর্মকাণ্ডে বারবার প্রমাণিত হয়েছে। এরা দেশের ভবিষ্যত তারুণ্যকে ধ্বংস করতে মদকে সহজলভ্য করছে। শিক্ষা থেকে ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা তুলে দিচ্ছে। এই সরকার ভোট ব্যবস্থাকে আক্ষরিক অর্থেই হত্যা করেছে। মানুষের বাকস্বাধীনতা কেড়ে নিয়েছে। উন্নয়নের নামে হরিলুট করে যাচ্ছে।”

তিনি বলেন, “স্বাধীনতার ৫১ বছরের বাংলাদেশ আজ আর্থিকভাবে ভঙ্গুর এবং প্রাকৃতিকভাবে বিপর্যস্ত। এই অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে ইসলাম ছাড়া আর কোন পথ নেই। তাই আসুন! আগামী নির্বাচনে ইসলাম ও মানবতার প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশকে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করুন। কথা দিচ্ছি- পরিস্থিতি বদলে যাবে। বিপদে-আপদে আমাদের পাশে পাবেন। আপনাদের অধিকার ফিরিয়ে আনা হবে, ইনশাআল্লাহ।

পীর সাহেব বলেন, “রাজনীতি মানুষের কল্যাণের জন্য। গণমানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য। আজ দেশের সাধারণ নাগরিকের কোনো অধিকার নেই, কোনো সম্মান নেই। সব অধিকার ভোগ করছে ক্ষমতাসীন এবং তাদের দোসররা। আমরা দেশের সকল নীতিবান, ভালো মানুষ ও আদর্শ নাগরিকদের নিয়ে একটি সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে চাই। সংঘাতের নোংরা রাজনীতির অবসান চাই। তাই আগামী নির্বাচন দলের জন্য নয়; সমৃদ্ধ ও কল্যাণকর দেশের জন্য হোক। আমরা স্বাধীনতার মূল লক্ষ্য অর্জনে সবাইকে সাথে নিয়ে এগিয়ে যেতে চাই।”

তিনি আরো বলেন, “আমরা যদি ক্ষমতায় যেতে পারি, তাহলে দেশে ন্যায়ের শাসন প্রতিষ্ঠা হবে। সব নাগরিকের মৌলিক অধিকার সুরক্ষা হবে। দুর্নীতি উৎখাত করা হবে। প্রতিহিংসা ও জিঘাংসার পরিবর্তে সমঝোতা ও সহনশীলতার রাজনীতির বিকাশ ঘটবে। প্রতিবেশী রাষ্ট্রসহ বিশ্বসম্প্রদায়ের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখা হবে। সুদ, ঘুষ ও অপচয় বন্ধ করা হবে। মাদক ও চাঁদাবাজি উৎখাত করব। নারী নির্যাতন ও মানব পাচার প্রতিরোধ করব। দ্রব্যমূল্য মানুষের সামর্থের মধ্যে রাখতে সিন্ডিকেটবাজি বন্ধ করা হবে। সন্ত্রাস নির্মূল করা হবে। দলীয়করণ বন্ধ করা হবে। শিষ্টের লালন ও দুষ্টের দমন নীতি গ্রহণ করা হবে। সুষম অর্থনৈতিক ব্যবস্থার মাধ্যমে ধনী-দরিদ্রের ব্যবধান কমাব। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠা করব। বেকারত্ব দূর করব এবং কৃষক-শ্রমিকসহ সব শ্রমজীবী ও পেশাজীবী মানুষের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠা করব।”

দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য প্রিন্সিপাল মাওলানা সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল-মাদানী বলেন, “বন্যায় দেশের মানুষ অসহায় ও মানবেতর জীবন যাপন করছে। বানভাসি মানুষের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা নেই। খোলা আকাশের নিচে, ঘরের চালে, টিলায় অত্যন্ত মানবেতর জীবন যাপন করছে। খাবার পাচ্ছে না, ঔষধ পাচ্ছে না। প্রয়োজনীয় আসবাপত্রের অভাব, বিশুদ্ধ পানির অভাব প্রকট হয়ে দেখা দিয়েছে। এমতাবস্থায় পদ্মা সেতু উদ্বোধনের নামে শত শত কোটি টাকা খরচের কোন মানে হয় না। সেতু উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে কোনো প্রকার অশ্লীলতার আশ্রয় নিলে আল্লাহর গজবে দেশ আরো নিপতিত হবে। এজন্য সকলকে পাপ-গুনাহমুক্ত জীবন যাপন করতে হবে। সেইসাথে তওবা করে ইসলামে ফিরে আসতে হবে।”

অধ্যক্ষ মাওলানা ইউনুছ আহমাদ বলেন, আমরা দেশকে ভালোবাসি। দেশে প্রকৃত শান্তি প্রতিষ্ঠা ও জনমনে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা দূর করতে চাই। মানুষকে স্বস্তি ও নিরাপত্তা, ন্যায়বিচার ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে চাই। মানুষের মানবীয় ও মৌলিক অধিকার ফিরিয়ে দিয়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি, প্রতিহিংসা, জিঘাংসা আর ধ্বংসের রাজনীতির চির-অবসান চাই। দেশের সব নাগরিকের শান্তিপূর্ণ ভ্রাতৃপ্রতিম সহাবস্থান চাই এবং দেশকে ঐক্যবদ্ধভাবে উন্নতি ও সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিতে চাই।

শেয়ার করুন

অন্যান্য জাতীয় কর্মসূচি, গণআন্দোলন, বিভাগীয় সমাবেশ, সমাবেশ

Scroll to Top

সদস্য ফরম

নিচের ফরমটি পূরণ করে প্রাথমিক সদস্য হোন

small_c_popup.png

প্রশ্ন করার জন্য নিচের ফরমটি পূরণ করে পাঠিয়ে দিন