🔷 ১৫ দফা দাবিতে খুলনা বিভাগীয় সমাবেশ
🔷 আগামী নির্বাচন জাতীয় সরকারের অধীনে হতে হবে– বিভাগীয় সমাবেশে পীর সাহেব চরমোনাই
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর আমীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম (পীর সাহেব চরমোনাই) বলেছেন, গণকমিশন নামে একটি দেশবিরোধী শক্তি দেশকে অনিশ্চিত গন্তব্যে ঠেলে দিতে চাচ্ছে। তারা দেশের সম্মানিত ১১৬জন আলেম এবং ১০০০ মাদরাসার তালিকা করে দেশের সংবিধানবিরোধী কাজ করছে। এজন্য তথাকথিত গণকমিশনকে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে। ওই অপশক্তি সাম্প্রদায়িকতাকে উস্কে দিতে কাজ করছে। এধরণের দেশ ও ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ড রুখে দিতে এখনই সকলকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। তিনি বলেন, জনগণ আজ ভালো নেই, সাধারণ মানুষ তাদের চাহিদা সঠিকভাবে পূরণ করতে পারছেনা। কারণ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য লাগামহীনভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ভোজ্য তেল, চাল, ডাল, গ্যাসসহ সকল নির্মাণসামগ্রী মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে। অথচ সরকার এটাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। সরকার এ ব্যপারে যথাযথ কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। ফলে সাধারণ মানুষ ক্ষোভে ফুঁসছে; কিন্তু প্রতিবাদও করতে পারছে না হামলা-মামলা ও হয়রানির ভয়ে। পীর সাহেব বলেন, স্বাধীনতার ৫১তম বর্ষে এসেও আজকের সরকার ৭১ পূর্ববর্তী সরকারের মতো, নিপীড়নমূলক আচরণ করছে। মানুষ ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত। আগামী নির্বাচন জাতীয় সরকারের অধীনে দিতে হবে এবং ইভিএম বাতিল করতে হবে। ভোট ডাকাতির মেশিন দিয়ে ভোট গ্রহণ চলবে না।
২১ মে ২০২২ শনিবার, দুপুর ২টায় খুলনা রেলস্টেশন সংলগ্ন কদমতলা রোডে অনুষ্ঠিত বিশাল সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি উপরিউক্ত কথা বলেন। কথিত ‘গণকমিশন’ কর্তৃক দেশের সম্মানিত ১১৬ জন আলেম ও ১০০০ মাদরাসার বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন অভিযোগ এবং ইসলাম ও দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র-চক্রান্তের প্রতিবাদ, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদ, শিক্ষা-সিলেবাসে ধর্মীয় শিক্ষার সংকোচন বন্ধ, ইসলাম, দেশ ও মানবতাবিরোধী মদের বিধিমালা বাতিল, স্বাধীনতার মূল লক্ষ্য-সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা এবং দুর্নীতি ও সন্ত্রাসমুক্ত কল্যাণরাষ্ট্র গঠনে ইসলামী হুকুমত কায়েমের লক্ষ্যে, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ খুলনা বিভাগের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত বিশাল সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন দলের নায়েবে আমীর অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা আব্দুল আউয়াল।
বক্তব্য রাখেন দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান, সহকারী মহাসচিব মাওলানা আব্দুল কাদের, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যাপক বেলায়েত হোসেন ও মাওলানা শোয়াইব হোসেন, দপ্তর সম্পাদক মাওলানা লোকমান হোসেন জাফরী, যুবনেতা ইঞ্জিনিয়ার আতিকুর রহমান মুজাহিদ, ছাত্রনেতা সহ-সভাপতি শরিফুল ইসলাম রিয়াদ, শ্রমিকনেতা মুফতী মোস্তফা কামাল, মুফতী আমানুল্লাহ, অধ্যাপক মাওলনা আব্দুল্লাহ ইমরান, অধ্যাপক খাদেমুল ইসলাম, মাওলানা তাসনীম, ডা. কাজী ওয়ায়েস কুরনী, হা. মনিরুজ্জামান, মুহা. আইউব আলী মিয়া, হাসানুজ্জামান সজিব, বীর মুক্তিযোদ্ধা আহমাদ আলী, ডা. এইচ এম মোমতাজুল করিম, মাওলানা মাহমুদুল হাসান, আল: আব্দুল হালীম আল. শামসুদ্দিন মোল্লা, মুফতি মাহবুবুর রহমান, মাওলানা আবু সাইদ শেখ হাসান ওবায়দুল করিম, আল. মাওলানা দ্বীন ইসলাম, মুফতী রবিউল ইসলাম রাফে, মাওলানা শাইখুল ইসলাম বিন হাসান, আবুল কালাম আজাদ, আল. জাহিদুল ইসলাম, মুহা. মেহেদী হাসান, আল. আবুল কাশেম, মুহা. সাইফুল ইসলাম, মাওলানা আসাদুল্লাহ হামিদি, মুফতী আশরাফুল ইসলাম, আব্দুল্লাহ নোমান প্রচার, গাজী ফেরদাউস সুমন, মাওলানা হারুন অর রশিদ, মাওলানা এস.কে নাজমুল হাসান, মুফতি শেখ আমীরুল ইসলাম, এইচ এম খালিদ সাইফুল্লাহ, মুহা. মইনুদ্দিন, ইনামুল হাসান সাইদ, আল. আমজাদ হোসেন, হাফেজ আ. লতিফ, আল. আবু তাহের, মাল্লা রবিউল ইসলাম তুষার, ফরহাদ মোল্লা,আব্দুল্লাহ আল মামুন, নিজাম উদ্দিন, মাওলানা আব্দুস সাত্তার, মাওলানা হাফিজুর রহমান, হায়দার আলী, মুহা. ইমরান হোসেন মিয়াগাজী মুরাদ হোসেনমুফতী হেলাল উদ্দিন শিকারীমাওলানা মাহবুবুর রহমানমুফতী ফজলুল হক।
সমাবেশ পরিচালনা করেন শেখ মো. নাসির উদ্দিন, হাফেজ আসাদুল্লাহ গালীব ও মুফতি ইমরান হোসাইন।
সমাবেশে ১৫ দফা দাবি পেশ করা হয়। দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে, ১. যেকোনো মূল্যে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধ করতে হবে। বাজার কারসাজির সাথে জড়িতদের আইনের আওতায় আনতে হবে।
২. দেশে মদ ও সকল ধরনের মাদকদ্রব্য নিষিদ্ধ করতে হবে।
৩. শিক্ষার সকল স্তরে ধর্মীয় শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করতে হবে; পূর্ণ ও আবশ্যিক বিষয় হিসেবে গণ্য করতে হবে।
৪. প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মুসলিম শিশুদের জন্য নামাজ শিক্ষা ও কোরআন শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করতে হবে।
৫. শিক্ষা সিলেবাস থেকে চরম নাস্তিকক্যবাদী সকল ধর্মবিরোধী, অবৈজ্ঞানিক ও বস্তাপঁচা ডারউইনের থিউরি বাদ দিতে হবে।
৬. কারান্তরীণ সকল মজলুম আলেম এবং রাজবন্দিদের মুক্তি দিতে হবে।
৭. জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পূর্বে জাতীয় সংসদ ভেঙ্গে দিতে হবে।
৮. সকল নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের মতামত নিয়ে নির্বাচনকালীন জাতীয় সরকার গঠন করতে হবে।
৯. তফসিল ঘোষণার পর থেকে নির্বাচিত সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পূর্ব পর্যন্ত সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েন করতে হবে এবং নির্বাচনের দিন সশস্ত্র বাহিনীর হাতে বিচারিক ক্ষমতা দিতে হবে।
১০. নির্বাচনে সকল দলের জন্য সমান সুযোগ তৈরি করতে হবে। রেডিও, টিভিসহ সকল সরকারি বেসরকারি গণমাধ্যমে সবাইকে সমান সুযোগ দিতে হবে এবং রাজনৈতিক দলের নেতা কর্মীদের বিরুদ্ধে সকল ধরনের হয়রানি বন্ধ করতে হবে।
১১. দুর্নীতিবাজদেরকে নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করতে হবে।
১২. নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার বন্ধ রাখতে হবে।
১৩. রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, জাতীয় সংহতি ও কার্যকর সংসদ প্রতিষ্ঠায় জাতীয় নির্বাচনে সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতির (P.R) নির্বাচন ব্যবস্থা প্রবর্তন করতে হবে।
১৪. গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্যে প্রণীত বিতর্কিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল করতে হবে।
১৫. সকল রাজনৈতিক দলের জন্যে সভা-সমাবেশসহ সাংবিধানিক স্বীকৃত সকল রাজনৈতিক কর্মসূচি ও বাকস্বাধীনতা উন্মুক্ত করতে হবে।
পীর সাহেব বলেন, স্বাধীনতা পরবর্তী যারাই ক্ষমতায় এসেছে, তারা সকলেই জনআকাঙ্ক্ষাকে বাস্তবায়ন করতে ব্যর্থ হয়েছে। গণতন্ত্রের নামে সর্বত্র দলীয়করণ এবং স্বৈরতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছে। গুম ও খুনের রাজত্ব কায়েম করেছে। দুর্নীতি মহামারী আকার ধারণ করেছে। রাষ্ট্রের রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতি ঢুকে পড়েছে। লুটপাট ও সুদ-ঘুষে দেশ সয়লাব। যুব সমাজকে ধ্বংস করতে মদের বিধিমালা প্রণয়ন করতে সরকারও মরিয়া হয়ে উঠেছে। পীর সাহেব চরমোনাই বলেন, ভরা মৌসুমেও চালের দাম বৃদ্ধি মেনে নেয়া যায় না। সরকার সিন্ডিকেটের কাছে হার মেনেছে। এর মধ্যে আবার বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে। এভাবে একটি দেশ চলতে পারে না।
তিনি বলেন, ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ নবম জাতীয় সংসদে একতরফাভাবে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী পাশ করার পর থেকেই রাজনৈতিক সংকটে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। রাজনৈতিক সংকট উত্তরণে বারবার দাবী জানিয়ে আসছি। দেশের প্রায় সব রাজনৈতিকদল এবং নাগরিকসমাজের প্রতিনিধিগণ সংকট সমাধানের উদ্যোগ গ্রহণের কথা বলে আসলেও, কার্যকর কোন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। আওয়ামীলীগ সরকার দেশের নির্বাচন ব্যবস্থাকেই ধ্বংস করে ফেলেছে। বিগত ১৩ বছরে দেশে কোন সুষ্ঠু নির্বাচন হয়নি। আবারও ২০১৪ ও ১৮ এর নির্বাচনের মতো নির্বাচনের নামে প্রহসন হবে। রাতের ভোটে নির্বাচিত বর্তমান সংসদের কোন নৈতিক বৈধতা নেই।
দলের সিনিয়র নায়েবে আমীর মুফতী ফয়জুল করীম বলেন, বিদেশে টাকা পাচারকারীদের ব্যাপারে কোন বক্তব্য নেই। অথচ একটি পক্ষ দেশকে অস্থিতিশীল করতে মাঠে নেমেছে। সরকার যদি ভোটের অধিকার বারবার কেড়ে নিতে চান তাহলে বাংলার মানুষ আপনাদেরও উৎখাত করে ছাড়বে। আমরা কোন হামলা, মামলা বা বুলেটের ভয় করি না। বাংলার মানুষ আইয়ুব খানের বুলেটের ভয় পায়নি, আপনাদের এসব জুলুম নির্যাতনকেও ভয় পায় না। তিনি বলেন, দেশে কোথাও মদের দোকান খোলা হলে বাংলাদেশের জনতা মেনে নেবে না। তিনি বলেন, মদের বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর কঠোর অবস্থান ছিলো। তাঁর কণ্যার সময় মদের আইন পাশ হতে পারে না। তিনি কারাবন্দী সকল আলেমের মুক্তি চান।
– প্রেস বিজ্ঞপ্তি