ভারতের আগ্রাসন মোকাবেলায় এবং দেশের স্বাধীনতা রক্ষায় জাতীয় ঐক্য প্রয়োজন
-ইসলামী আন্দোলনের আলোচনা সভায় নেতৃবৃন্দ
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর সিনিয়র নায়েবে আমীর মুফতী সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম শায়খে চরমোনাই বলেছেন, বন্ধুত্বের ছদ্মাবরণে বাংলাদেশ আজ নানামুখী ভারতীয় আগ্রাসনের শিকার। ক্ষমতাসীনদের নতজানু পররাষ্ট্রনীতি এবং ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে অতিমাত্রায় ভারতপ্রীতির কারণে স্বাধীনতার অর্ধশত বছর পরেও দেশবাসী স্বাধীনতা সংকটে ভুগছে। রাজনীতি, অর্থনীতি, শিক্ষা, সংস্কৃতি সর্বক্ষেত্রে ভারতের আধিপত্য দিনদিন বেড়েই চলেছে, যা আমাদের স্বাধীন অস্তিত্বকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। সরকার ভারতকে ট্রানজিট, ট্রান্সশিপমেন্ট, বন্দর ব্যবহারসহ অনেক কিছু দিলেও তারা বাংলাদেশকে কিছুই দেয়নি। এমনকি বহুল আলোচিত ফারাক্কা ও তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যাও দেইনি। সীমান্ত হত্যাও বন্ধ হয়নি। দেশপ্রেমিক নাগরিক হিসেবে দেশকে এই স্বাধীনতা সংকট থেকে উত্তরণে প্রয়োজন ঐক্যবদ্ধ।
মুফতী ফয়জুল করীম বলেন, গুম-খুন হয় দেশে সন্ধান মিলে ভারতে। মেজর অব. সিনহাকে হত্যার পর তাকে বাঁচাতে ভারতীয় লবিং শুরু হয়ে গেছে। ভারতের পররাষ্ট্র সচিব হর্ষ বর্ধন শ্রিংলার সাথে প্রধানমন্ত্রীল গোপন বৈঠক কিসের আলামত? দেশের সর্বক্ষেত্রে ভারতের আধিপত্য চলছে। শিক্ষা, প্রশাসন, স্বাস্থ্য সব সেক্টরেই ভারতের থাবা। দেশকেও অর্থনৈতিকভাবে শোষণ করে দেশকে পঙ্গু করে দিচ্ছে ভারত।
আজ শুক্রবার বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবের আব্দুস সালাম হলে “ভারতীয় আগ্রাসনের স্বরূপ ঃ আমাদের স্বাধীনতা সংকট”-শীর্ষক আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সংগঠনের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন সংগঠনের প্রেসিডিয়াম সদস্য আল্লামা নূরুল হুদা ফয়েজী, মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ইউনুছ আহমাদ, মুসলিম লীগের স্থায়ী কমিটির সদস্য আতিকুল ইসলাম, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাওলানা মাহফুজুল হক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের প্রফেসর ড. আব্দুল লতিফ মাসুম, ডাকসুর ভিপি নুরুল হক নুরু, নেজামে ইসলাম পার্টির মহাসচিব মুফতী আব্দুল কাইঊম, খেলাফত মজলিসের সাংগঠনিক সম্পাদক ড. মুস্তাফিজুর রহমান ফয়সল, দৈনিক ইনকিলাবের সহকারি সম্পাদক মাওলানা উবায়দুর রহমান খান নদভী, অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন, অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান, মাওলানা মুহাম্মদ ইমতিয়াজ, অধ্যক্ষ শেখ ফজলে বারী মাসউদ, যুবনেতা কেএম আতিকুর রহমান, ছাত্রনেতা এম হাছিবুল ইসলাম প্রমুখ। উপস্থিত ছিলেন ইঞ্জিনিয়ার আশরাফুল আলম, আহমদ আবদুল কাইয়ূম, লোকমান হোসাইন জাফরী, মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাকী, আলহাজ্ব আব্দুর রহমান, মাওলানা নেছার উদ্দিন, আলহাজ্ব জান্নাতুল ইসলাম, গাজী রুহুল আমীনসহ কেন্দ্রীয়, সহযোগি সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
অধ্যক্ষ ইউনুছ আহমাদ বলেন, দেশ, ইসলাম ও মানবতা আজ চরম হুমকির মুখে। ভারতীয় আধিপত্যের জয়জয়কার। এমতাবস্থায় দৃষ্টিভঙ্গি ও চিন্তার ঐক্য গড়ে তোলার মাধ্যমে জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে সকলকে এগিয়ে আসতে হবে।
আতিকুল ইসলাম বলেন, ভারতের বর্ণবাদী হিন্দুদের আগ্রাসনের শিকার হয়ে মুসলমানরা জিবন দিচ্ছে। কাশ্মীরের স্বাধীনতার উপর আঘাত করছে। শ্রীলঙ্কার রাজা-রাণীকে হত্যা করেছে ভারত। বাংলাদেশের দুই রাষ্ট্রপতি হত্যার পিছনে ভারতের হাত। মুসলমানরা যখন ঐক্যবদ্ধ ছিলো ৬৯ সালের পূর্বে ফারাক্কা বাঁধ, সীমান্ত হত্যার সাহস ভারত পায়নি। আমাদের দেশের সরকাররা যখন ভারতের তুষ্টির জন্য কাজ করছে তখনই ভারত দেশের সর্বত্র তাদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছে। এমতাবস্থায় পীর সাহেব চরমোনাই’র নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্য সময়ের দাবি।
মাওলানা মাহফুজুল হক বলেন, দেশ অত্যন্ত কঠিন সময় পার করছে। ভারত আমাদেরকে সবদিক থেকে গ্রাস করে ফেলেছে। স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব বিপন্নের পথে। এ মুহুর্তে দেশ, ইসলাম ও মানবতা রক্ষায় জাতীয় ঐক্য প্রয়োজন। এ জন্য ইসলামী আন্দোলনকে উদ্যোগ নেয়ার আহ্বান জানান তিনি।
ড. আব্দুল লতিফ মাসুম বলেন, একটি রাষ্ট্রকে টিকে থাকতে হলে নাগরিক অধিকার, বাক স্বাধীনতা প্রয়োজন। কিন্তু আজ তা নেই।
ভিপি নুরুল হক নুরু বলেন, ভারতের বিরুদ্ধে কথা বলার অনেকে সাহসও পায় না। বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে আলোচনা করা গেলেও ভারতের বিরুদ্ধে আলোচনা করা অনেক কঠিন। ভারতের বিভিন্ন জুলুমের বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস সরকারের নেই। সরকার গঠনে ভারতের প্রভাবসহ সর্বক্ষেত্রে ভারতের আধিপত্য ও হিংস্র থাবা বিস্তার চলছে। এ থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে সকল দেশপ্রেমিক শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।