ভারতের উত্তরপ্রদেশের অযোধ্যায় অবস্থিত শতাব্দীর প্রাচীন বাবরি মসজিদ ভেঙে একই স্থানে রাম মন্দির প্রতিষ্ঠার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর আমীর মুফতী সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম (পীর সাহেব চরমোনাই। তিনি বলেন, বারবি মসজিদস্থলে কোনো মন্দির ছিল না, তা ঐতিহাসিকভাবে প্রমাণিত। বাবরি মসজিদের নিচে ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় বারবার খুঁড়েও কোনো মন্দিরের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি। কেবলমাত্র হিংসার বশবর্তী হয়ে মুসলমানদের প্রাণের চেয়ে প্রিয় আল্লাহর ঘর মসজিদকে ভেঙে মন্দির নির্মাণের উদ্বোধন করে সাম্প্রায়িকতার পরিচয় দিয়েছে।
আজ মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে পীর সাহেব চরমোনাই বলেন, অযোধ্যায় বাবরি মসজিদ ভেঙে রাম মন্দির নির্মাণের যে পাঁয়তারা চলছে, তা পূর্ণাঙ্গ রূপ দিতে মন্দির উদ্বোধন করে বিশ্বব্যাপী অশান্তির দাবানল জ্বালিয়ে দিয়েছে। ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে শাসকেরা সাম্প্রদায়িকতার পক্ষ নেয়। শাসকরা রাম ও রহিমের মধ্যে যে পার্থক্য সৃষ্টি করেছে, আমরা তা ঘোঁচাতে সর্বদা সচেষ্ট থাকব। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাম মন্দির উদ্বোধন সে অঞ্চলের সংখ্যালঘুদের হুমকির মুখে ফেলে দেওয়া হয়েছে।
পীর সাহেব চরমোনাই বলেন, মুসলিম জাতিসত্তার ওপর আঘাত হেনে ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদ ভেঙে এর স্থলে রাম মন্দির স্থাপন করে ভারত সরকার সাম্প্রদায়িক সংকীর্ণতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য নরেন্দ্র মোদি সরকার মুসলমানদের এ ঐতিহাসিক স্থাপনাকে মাটিতে মিশিয়ে দিয়ে সাম্প্রদায়িকতার এক ন্যক্কারজনক নজির স্থাপন করেছে। এহেন কর্মকান্ডের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানোর ভাষা হারিয়ে ফেলেছি।
পীর সাহেব চরমোনাই বলেন, বহুবার খোঁড়াখুঁড়ি চালানোর পরও কোনো প্রত্নতাত্ত্বিকই মন্দির খুঁজে পাওয়া যায়নি। এমনকি সর্বশেষ ভারতের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ ‘দ্য আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়া (এআইএ)’র প্রত্নতাত্ত্বিক খননেও কোনো মন্দিরের অস্তিত্ব মেলেনি। পনেরো শতকের ঐতিহাসিক স্থাপনা বাবরি মসজিদ ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর গুঁড়িয়ে দেয় বর্তমান ক্ষমতাসীন বিজেপি, শিব সেনা ও বিশ্ব হিন্দু পরিষদের উগ্রপন্থিরা। বাবরী শহীদ করে তদস্থলে মন্দির উদ্বোধন করে উগ্রবাদী মোদি সরকার ইতিহাসে কলঙ্কিত হয়ে থাকবেন। মুসলমানরা সাড়ে সাতশত বছর শাসন করেছেন। যদি মুসলমানরা ইচ্ছে করতেন ভারত উপমহাদেশ হিন্দু শূণ্য করতে পারতেন, কিন্তু মুসলমান শাসকগণ তা করেননি। এ ইতিহাস ভারত সরকারকে ভুলে গেলে চলবে না।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমীর আরও বলেন, কট্টর হিন্দুত্ববাদী মোদি সরকার এবার পবিত্র বাবরি মসজিদকে ভেঙে রাম মন্দির উদ্বোধন করেছে! ভারতের সাধারণ নির্বাচনের আগে বিতর্কিত রাম মন্দিরের উদ্বোধন প্রধানমন্ত্রী মোদির তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার অনানুষ্ঠানিক প্রচার হিসেবেই দেখছি আমরা। আমরা এহেন সাম্প্রদায়িক কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ জানাই। উগ্রবাদী মোদি সরকারের এমন কর্মকাণ্ডে মুসলিম বিশ্ব হৃদয়ে আঘাত পেয়েছে এবং কলিজায় রক্তক্ষরণ হয়েছে। মসজিদের জায়গায় মন্দির নির্মাণ মুসলমানরা কখনো মেনে নেবে না। পীর সাহেব মোদি সরকারকে এহেন কর্মকান্ড থেকে ফিরে আসার আহ্বান জানান।