বইটি পড়তে ও ডাউনলোড করতে উপরের ছবিতে ক্লিক করুন।
বইয়ের নাম
ঢাকা সিটি উত্তর নির্বাচনী ইশতেহার ২০২০
অনুলিপি
দূষণমুক্ত স্মার্ট ঢাকা গড়ার লক্ষে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর আমীর পীর সাহের চরমোনাই মনোনিত
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে হাতপাখা প্রতীক নিয়ে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বী
অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা শেখ ফজলে বারী মাসউদ-এর
নির্বাচনী ইশতেহার
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ।
সকল প্রশংসা মহান আল্লাহ তা’য়ালার। যিনি চূড়ান্ত সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী, যিনি বিশ্বজগতের প্রতিপালক। দরুদ ও সালাম হযরত মুহাম্মাদ সা. এর ওপর, যিনি মানব সভ্যতার জন্য চূড়ান্ত ও অপরিবর্তনীয় জীবন বিধান নিয়ে অবতীর্ণ হয়েছেন এবং মানব জাতীকে চিরন্তন মুক্তির পথ দেখিয়েছেন।
প্রিয় নগরবাসী!
আসন্ন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদপ্রার্থী হিসেবে ইশতেহার ঘোষণার প্রারম্ভেই শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি ৭১ এর মহান মুক্তি সংগ্রামে অংশগ্রহণকারী সকল বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি যারা জীবনের বিনিময়ে স্বাধীন করেছেন এই ভূখণ্ড। পরকালে তাঁদের যথাযোগ্য মর্যাদা কামনা করছি। যারা জীবিত আছেন তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে তাদের অসমাপ্ত সংগ্রাম অব্যহত রাখার প্রত্যয় ব্যক্ত করছি। বিশেষ করে স্মরণ করছি ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা আমীর মাওলানা সৈয়দ ফজলুল করীম, পীর সাহেব চরমোনাই রহ. কে। রুহের মাগফিরাত কামনা করছি মরহুম জনাব আনিসুল হক, সাদেক হোসেন খোকা, মুহাম্মাদ হানিফসহ ঢাকার সাবেক মেয়র ও কাউন্সিলরবৃন্দের।
প্রিয় সচেতন নাগরবাসী!
আমাদের সংবিধানের ৫৯ নং ও ৬০নং ধারায় বর্ণিত স্থানীয় সরকার ব্যবস্থার সবচেয়ে বৃহৎ ও গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠন হলো ঢাকা সিটি কর্পোরেশন। যার একাংশ হলো ঢাকা উত্তর সিটি। স্থানীয় সরকার ব্যবস্থার মাধ্যমেই রাষ্ট্র পরিচালনায় জনগনের কার্যকর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হয়। সিটি কর্পোরেশনের নেতৃত্বের দক্ষতা, যোগ্যতা, সদিচ্ছা ও দুরদর্শীতা এবং প্রতিষ্ঠান হিসেবে ডিএনসিসির সক্ষমতা, কার্যকারিতা, জবাবদিহি ও সচ্ছতার মাধ্যমে ডিএনসিসি হয়ে উঠতে পারে একটি অন্তর্ভূক্তিমুলক,অংশগ্রহণমূলক ও জনকল্যাণকর প্রতিষ্ঠান। অন্যদিকে নেতৃত্বের অযোগ্যতা, অদক্ষতা,অদুরদর্শীতা এবং প্রতিষ্ঠান হিসেবে ডিএনসিসির অক্ষমতা ও অসচ্ছতা ডিএনসিসিকে একটি কতৃত্ববাদী, জনবিচ্ছিন্ন ও জনবিমুখ প্রতিষ্ঠানে পরিণত করতে পারে।
প্রিয় সিটি বাসী!
আপনারা জানেন, সিটি কর্পোরেশনের মেয়রকে “নগর পিতা” বলে সম্মোধন করা হয়। এর অর্থ হলো, সিটি কর্পোরেশন একটি পরিবার। একটি পরিবারের মধ্যে যে ধরনের নিবিড় পারস্পরিক দেনা-পাওনা/চাওয়া-পাওয়ার সম্পর্ক থাকে তা নিশ্চিত করার জন্য যে ধরনের অন্তর্ভূক্তিমূলক, পরষ্পর নির্ভর ব্যবস্থা গড়ে তোলার দরকার তার পুরো দায়িত্ব সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের ওপরে। অন্যদিকে মেয়রকে ‘নগর পিতা’ বলার অর্থ হলো এই নগরের সর্বোচ্চ দায়িত্ববান ব্যক্তি হলেন মেয়র। এই শহরের সকল সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনা, হাসি-কান্না ও সুযোগ-সুবিধার অংশীদার হবেন মেয়র।
প্রিয় ঢাকাবাসী!
একজন নগর পিতা কি ধরনের আন্তরিক, দায়িত্ববান ও নিষ্ঠাবান হতে হয় তার দৃষ্টান্ত হযরত ওমর রা. যিনি নগরের অভূক্ত নাগরিকের কাছে নিজে খাদ্য বহন করে নিয়ে গেছেন। একজন নেতা কতটা জনঘনিষ্ট হতে হয় তার দৃষ্টান্তও হযরত ওমর রা.। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মানুষের সত্যিকার উন্নয়নের জন্য দরকার হযরত ওমর রা. এর নীতিতে নীতিবান কোন নেতা।
প্রিয় সিটি কর্পোরেশনবাসী!
১৬১০ সালে ইসলাম খান চিশতি ঢাকায় বাংলার রাজধানী স্থাপন করেন। চারশতাধিক বছরের ঐতিহ্যময় এই ঢাকা কেবল বাংলাদেশই নয় বরং গোটা ভারত উপমহাদেশের জীবন-সমাজ ও রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনে ও পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে ঢাকা প্রধান ভূমিকা পালন করেছে। আবার পাকিস্তানী শাসকদের অপশাসনের বিরুদ্ধেও সংগ্রাম গড়ে তুলেছে ঢাকা। ঢাকা আক্ষরিক অর্থেই বাংলাদেশের প্রাণকেন্দ্র। এখান থেকে দেশের সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক সাংস্কৃতিক গতিপথ নির্ধারিত হয়।
প্রিয় ঢাকা উত্তর বাসী!
বাংলাদেশের প্রাণকেন্দ্র এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এই শহরকেই বিগত বছরগুলোতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ করা হয়েছে। তিলোত্তমা একটি শহরকে সীমাহীন নিপিড়ন, নিষ্পেষণ ও অবিচার করে বসবাসের অযোগ্য শহরে পরিণত করা হয়েছে। ঢাকার বায়ুমান বিশ্বের সবচেয়ে খারাপ। ঢাকার খাল-বিল, নদী-নালাগুলো দখল করে নেয়া হয়েছে। ঢাকার পার্ক ও খেলার মাঠগুলো জবর দখল করা হয়েছে। ঢাকাকে মশার অভয়ারণ্য বানানো হয়েছে। ঢাকার রাস্তাগুলো ক্ষতবিক্ষত করা হয়েছে। ঢাকার রাজপথকে স্থবির করা হয়েছে। ঢাকা আশ-পাশের নদীগুলোকে বিষাক্ত নর্দমা বানানো হয়েছে। ঢাকার খাদ্যে জীবননাশক বিষ, পানিতে মল, সামান্য বৃষ্টিতেই তৈরী হয় ভয়ংকর জলাবদ্ধাতা। ঢাকার ভবনগুলোকে দুর্যোগপ্রবণ করা হয়েছে। যেই ঢাকা বাঙ্গালী ও বাংলাদেশীদের এতো এতো উপকার করেছে সেই ঢাকাকে সত্যিকার অর্থেই হত্যা করা হয়েছে। জাতি হিসেবে এটা আমাদের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় নিষ্ঠুরতা, অকৃতজ্ঞতা ও নির্মমতা।
নগরবাসী ভাই ও বোনেরা!
মৃত প্রায় এই নগরীকে বাচাঁতে আমাদের আর সময় ক্ষেপন করার অবকাশ নেই। কোন ধরনের রাজনীতি করার সুযোগ নেই। দলান্ধতার কোন ফুরসত নেই। সময় এসেছে দল-মত নির্বিশেষে সকলে মিলে ঐক্যবদ্ধভাবে মৃতপ্রায় ঢাকাকে বাঁচানোর উদ্যোগ নেয়ার; এখন সময় ঢাকাকে উদ্ধার করার।
প্রিয় ভোটারগণ!
বাস্তবতার নিরিখে এই অপ্রিয় সত্য আমাদের স্বীকার করতেই হবে যে, বিগত বছরগুলোতে ঢাকাতে যারা মেয়র ছিলেন তারা সবাই আজকের এই অবস্থার জন্য অনেকাংশে দায়ী। তারা যদি দক্ষতা, যোগ্যতা ও সততার সাথে কাজ করতেন তাহলে ঢাকা ক্রমান্নয়ে এতোটা খারাপ হতো না। বিগত সময়ের মেয়রগন গালভরা বুলি দিয়ে ক্ষমতায় এসে নিজের আখের গুছিয়েছে। ঢাকাকে আরো বেশি করে মৃত্যুমুখে ঠেলে দিয়েছে।
প্রিয় ভাই ও বোনেরা!
ভোট একটি আমানত। এটাকে যথেচ্ছা প্রয়োগ করা আমানতের খেয়ানত। কাউকে ভোট দেয়া কোন আবেগ বা দলীয় বিষয় নয়। বরং এটি একটি নৈতিক বিষয়ও। যাকে তাকে ভোট দেয়া ইসলাম সম্মতও নয়। ইসলাম, দেশ ও মানবতার জন্য ক্ষতিকর ব্যক্তিকে ভোট দেয়া মারাত্মক গোনাহের কাজ। তাই বুঝে শুনে, চিন্তা-ভাবনা করে ভোট দিতে হবে। দলীয় আবেগ, ব্যক্তির প্রতাপ, আত্মীয় বা প্রতিবেশি হওয়া ভোট পাওয়ার যোগ্যতার অন্তর্ভূক্ত নয়। ভোট পাওয়ার যোগ্য ঐ ব্যক্তিই হবে যিনি উক্ত পদে যোগ্য। যার দ্বারা জনগনের সম্পদ লুণ্ঠিত হবে না। সমাজে বিশৃংখলা ছড়িয়ে পড়বে না। যার দ্বারা ইসলাম ও মুসলমানদের ক্ষতি সাধিত হবে না। এমন ব্যক্তিকে ভোট দেয়া শরয়ী দৃষ্টিকোণ থেকে আবশ্যক। আর অযোগ্য, ইসলাম বিদ্বেষী, নাস্তিকপ্রিয়, দেশদ্রোহী, লুটেরাকে ভোট দেয়া শরীয়তে গর্হিত কাজ।
প্রিয় নগরবাসী
তাই এবারের নির্বাচনে দল-মতের উর্ধ্বে উঠে ঢাকাকে রক্ষা করতে এবং দুষণমুক্ত স্মার্ট ঢাকা গড়তে ইসলামী আন্দোলনের আমীর, পীর সাহেব চরমোনাই কর্তৃক মনোনীত হয়ে আমি মেয়র পদপ্রার্থী হিসেবে আপনাদের সামনে এসেছি। একজন সচেতন অধিবাসী হিসেবে আমার দীর্ঘ দিনের অভিজ্ঞতা, নাগরিকদের মতামত ও নগরবিদদের সাথে পরামর্শক্রমে এই ইশতেহার তৈরী করেছি। আমার ইশতেহারের দুইটি অংশ। প্রথম অংশে ডিএনসিসিতে সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য কিছু নীতিগত প্রস্তাবনা এবং ২য় অংশে ঢাকার বর্তমান অবস্থা তুলে ধরে তা নিরসন কল্পে গৃহিত কর্মসূচি তুলে ধরা হয়েছে।
নীতিগত প্রস্তাবনা
১. দুর্নীতিমুক্ত করা :
দুর্নীতি একটি সর্বগ্রাসী মহামারি ডেঙ্গু নিয়ে যখন শহরব্যাপী আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছিলো তখন টিআইবির প্রতিবেদনে বেড়িয়ে এসেছে, ‘মশার ঔষধ ক্রয়ের ক্ষেত্রে ধাপে ধাপে ঘুষ লেনদেন ও দূর্নীতি হয়েছে রাজধানীর দুই সিটি কর্পোরেশনেই’ (ঘঞঠ ড়হষরহব/২৫ সেপ্টেম্বর-২০১৯)। একটি প্রাণঘাতি সমস্যার ক্ষেত্রেও দুর্নীতি করা সিটি কর্পোরেশন কর্মকর্তাদের দুর্নীতির খতিয়ান দিলে বিশাল শ্বেতপত্র প্রকাশ করতে হবে। সেদিকে না গিয়ে দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করছি যে, আমি নির্বাচিত হলে যে, কোন মূল্যে ডিএনসিসিকে দুর্নীতি মুক্ত করবো, ইনশাআল্লাহ।
২. স্বচ্ছতা আনয়ন:
সিটি কর্পোরেশন জনগনের স্থানীয় একটি প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানের প্রত্যেকটি কাজ কখন, কিভাবে কার মাধ্যমে করা হবে বা হচ্ছে তা ডিএনসিসির সকল মানুষের কাছে পরিষ্কার ভাবে জানা থাকবে। সেজন্য সিটিজেন চার্টার প্রদর্শন, তথ্যের অবাধ সরবারহ নিশ্চিত করা এবং কাজের পদ্ধতি সম্পর্কে জনগনকে নিয়মিত জানানো হবে।
৩. জবাবদিহি :
আমি মেয়র নির্বাচিত হলে প্রতি মাসে ড়ঢ়বহ ফরংপঁংপরড়হ ঝবংংরড়হ এ জনগনের মুখোমুখি হবো, ইনশাআল্লাহ এবং ডিএনসিসির প্রতিটি ওয়ার্ড কমিশনার ও ডিএনসিসির বিভিন্ন বিভাগের নির্বাহিরাও প্রতি মাসে জনতার মুখোমুখি হবে। প্রতিটি পেশাজীবি মানুষের জীবন সমস্যা শোনা হবে এবং এর নিরসনে তড়িৎ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। নগর ভবন সকল নগরবাসীর জন্য উন্মুক্ত থাকবে এবং ওয়ান স্টেপ সেবা প্রদান করা হবে। নগরীর উন্নয়ন ও পরিকল্পনা প্রণয়নে নাগরিকদের সম্পৃক্ততা নিশ্চিত করা হবে।
ইনশাআল্লাহ।
৪. শ্বেত পত্র প্রকাশ :
আমি নির্বাচিত হলে, ডিএনসিসি বিগত বছরগুলোরে কার্যক্রম ও দুর্নীতি নিয়ে শ্বেতপত্র প্রকাশ করা হবে। কাউকে লাঞ্চিত করা বা কাউকে হেয় করতে নয় বরং আগামীতে দুর্নীতির পথ বন্ধ করতেই এই পদক্ষেপ নেয়া হবে।
আমার এবং সকল ওয়ার্ড কমিশনার ও ডিএনসিসির কর্মকর্তাদের আয় ব্যয়ের হিসাব প্রতি বছর প্রকাশ করা হবে।
৫. নগর বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন :
ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের উন্নয়ন একটি বহুমাত্রিক ও বহুরৈখিক জটিল বিষয়। সেজন্য দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞদের সমন্নয়ে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করা হবে।
৬. নগর সরকার।
আধুনিক ও উন্নত বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্য প্রয়োজন সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসনিক কাঠামোর পরিবর্তন ও সংস্কার। সিটি কর্পোরেশনকে গতিশীল ও সেবামূলক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলতে মেট্রোপলিটন গভর্নমেন্ট বা নগর সরকার গঠন করা একান্ত প্রয়োজন।
বর্তমানে ব্রিটিশ-পাকিস্তানি ঔপনিবেশিক কাঠামো ও আইন দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে দেশের সিটি কর্পোরেশনগুলো। সিটি কর্পোরেশনে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। এ জন্য বর্তমানে সিটি কর্পোরেশনগুলো নগরবাসীর চাহিদা অনুযায়ী সেবা প্রদানে ব্যর্থ হচ্ছে। হোল্ডিং ট্যাক্স, আবর্জনা পরিষ্কার আর রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি ছাড়া দৃশ্যত সিটি কর্পোরেশনগুলোর আর কোনো কর্মকান্ড চোখে পড়ছে না।
কার্যত নাগরিক সেবার মধ্যে থাকে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি, পয়ঃপ্রণালি, জলাবদ্ধতা, যানবাহন, সড়ক, নগর পরিচ্ছন্নতা, পরিবেশ, যানজট এবং নাগরিক নিরাপত্তায় আধুনিক নগর পরিকল্পনা প্রণয়ন; যা পুরাতন আইন ও ব্যবস্থা দিয়ে বর্তমান সিটি কর্পোরেশনগুলোর পক্ষে বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়।
আধুনিক রাষ্ট্র ও জাতি গঠনে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিদ্যুৎ, পানি, পাতাল রেল, মনোরেল ও যানজটমুক্ত শহরসহ নগরবাসীর সেবা ও অধিকার প্রতিষ্ঠায় নগর সরকার প্রয়োজন। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের সব নগর সরকারে মেট্রোপলিটন কাউন্সিল থাকবে। মেট্রোপলিটন কাউন্সিলে সব শ্রম-র্কম-পেশার প্রতিনিধি, সব সেক্টর কর্পোরেশন, অধিদফতর, সমবায়, এনজিও, নারী এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতিনিধি থাকবে।
ঢাকার সমস্যা ও নিরসনে প্রস্তাবনা
১. বায়ুদূষণ:
বায়ুমান যাচাই বিষয়ক আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান ‘এয়ার ভিজ্যুয়াল‘ এর তথ্যমতে, গত নভেম্বরে ৮দিন বায়ুদূষণে ঢাকা বিশ্বে শীর্ষে ছিল। পর্যবেক্ষণ বলছে, বছরে ২০০ দিন ঢাকার বাতাস প্রচণ্ড অস্বাস্থ্যকর থাকে। দূষিত শহরের মধ্যে ঢাকার অবস্থান বিশ্বে দ্বিতীয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বেঁধে দেয়া মাত্রার চেয়ে ঢাকার বাতাসে ক্ষুদ্র কণার পরিমাণ ১০ গুণ বেশি। বায়ু দূষণে ঢাকার ২৪.৫% শিশুর ফুসফুসের সক্ষমতা দ্রুত কমে যায়। বায়ু দূষণের কবলে ঢাকার গাছপালার টিকে থাকার ক্ষমতা ৩০% কমে যাচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, মানুষ দূষিত বায়ুর সংস্পর্শে এলে তা নিশ্বাসের সঙ্গে দেহের ভেতরে ও রক্তে প্রবেশ করে। এতে মস্তিষ্কে অক্সিজেনের ঘাটতি হয় ও স্নায়ুগুলো ঠিক মতো কাজ করে না। ফলে মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায় এবং মানসিক অস্থিরতা তৈরি হয়। এতে আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়ে।
বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস) এর গবেষণা মতে, রাজধানীর ৭১ শতাংশ মানুষ বিষণ্নতায় ভুগছে। ৬৮ শতাংশ মানুষ কোন না কোন শারীরিক সমস্যায় আক্রান্ত। দূষণের কারণে মানুষের মানসিক ও শারীরিক সমস্যা বাড়ছে।
বায়ু দূষণের এই ভয়াবহতা থেকে ঢাকাবাসীকে রক্ষা করতে গত ৩০ অক্টোবর ২০১৮ জেনেভায় অনুষ্ঠিত ঋরৎংঃ মষড়নধষ অরৎ ঢ়ড়ষষঁঃরড়হ ধহফ যবধষঃয ংঁসসরঃ-এ টঘ ঊহারৎড়হসবহঃ ধহফ ঃযব বষরসধঃব ধহফ বষবধহ ধরৎ পড়ধষরঃরড়হ প্রস্তাবিত “২৫ ংপরবহপব-নধংবফ বভভবপঃরাব সবধংঁৎব ঃড় ৎবফঁবব ধরৎ ঢ়ড়ষষঁঃরড়হ (বাযু দূষণ রোধে বিজ্ঞানভিত্তিক ২৫ টি কার্যকর পদ্ধতি) অনুসরণ করা হবে।। এর মধ্যে জরুরী পদক্ষেপ হিসেবে ঢাকার উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ও রাস্তার ধুলোবালি নিয়ন্ত্রণ করা হবে। যত্রতত্র রাস্তা খোড়াখোড়ি বন্ধ করা হবে। কোন কারণে রাস্তা খোড়ার প্রয়োজন হলেও ধুলোবালি নিয়ন্ত্রণ পদ্ধাতি অনুসরণ করা হবে। ঢাকা উত্তরের প্রতিটি রাস্তায় দিনে অন্তত ২বার পানি ছিটানোর ব্যবস্থা করা হবে। ঢাকা উত্তরের সড়ক দ্বীপগুলোকে সবুজায়ন করা হবে এবং রাস্তার পার্শবর্তি স্থানেও সবুজায়ন করা হবে। যানবাহনের ধোয়া নিয়ন্ত্রণ কল্পে ঢাকায় ব্যক্তিগত গাড়ির ব্যবহার নিরুৎসাহিত করা হবে এবং ফিটনেসবিহীন যানবাহন ঢাকার রাস্তায় সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হবে।
২. পানি সমস্যার সমাধান
বিশুদ্ধ পানির সংকট দিন দিন প্রকট হচ্ছে। গত ৩ জুলাই’১৯ হাইকোর্টের নির্দেশে গঠিত কমিটির দেয়া প্রতিবেদন অনুযায়ী ঢাকার ওয়াসার পানিতে ব্যাক্টরিয়া, উচ্চ মাত্রার অ্যামোনিয়া এমনকি কিছু মলও পাওয়া যাচ্ছে। ঢাকা ওয়াসার দূষিত পানি পান করে লাখ লাখ মানুষ বিশেষ করে শিশুরা অধিক হারে পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। দূষিত পানির কারণে মানুষ ডায়রিয়া, কলেরা, জন্ডিস, টাইফয়েড, হেপাটাইটিস, কিডনি, লিভারসহ নানা জটিল ও প্রাণঘাতী সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।
এছাড়াও গরমের সময়ে এলাকার পর এলাকায় পানির জন্য হাহাকার তৈরী হয়। এক জন নাগরিকের প্রতিদিন গড়ে ১৪০লিটার পানির প্রয়োজন, যেখানে বস্তি অঞ্চলে পানি সরবারহ মাত্র ২০ লিটার। গবেষণায় দেখা গেছে, নগরীর ৫৫% মানুষ নিরাপদ পানি পাচ্ছে না। রাজধানীতে বসবাসরত দেড় কোটির বেশী মানুষের দৈনিক পানির চাহিদা আছে ২২০ কোটি লিটার। এর বিপরীতে তাদের কাছে সরবরাহ করা হচ্ছে ২০০ কোটি লিটার। এখনো ঘাটতি আছে ২০ কোটি লিটার বিশুদ্ধ পানি।
গত ২২ মার্চ ২০১৯ এ সমকালের রিপোর্টে বিএডিসির এক গবেষণার সূত্রে বলা হয়েছে, রাজধানী ঢাকার পানির স্তর সমুদ্রপৃষ্টের ১৬০ ফুট নিচে নেমে গেছে। অন্য দিকে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ঢাকার ভূস্তরের উচ্চতা ৫০ ফুট। সে হিসেবে ঢাকার পানির স্তর ভূ-পৃষ্ঠ থেকে গড়ে ২১০ ফুট নিচে অবস্থান করছে। একই প্রতিবেদন ঢাকা ওয়াসার বরাত দিয়ে জানাচ্ছে যে, রাজধানীবাসীর ব্যবহৃত পানির ৮৬ ভাগই ভূগর্ভস্থ পানি। এ অবস্থা চলতে থাকলে আগামীতে ঢাকার পানিতে সমুদ্রের লবন পানি চলে আসবে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এভাবে চলতে থাকলে এক সময় শুধু পানির অভাবেই ঢাকা ছাড়বে মানুষ।
আমি নির্বাচিত হলে ঢাকায় পানি সরবরাহের জন্য এবং ভুগর্ভস্থ পানির ওপরে নির্ভরতা কমানোর জন্য ঢাকা উত্তরে অন্ততঃ আরো দুইটি পানি শোধনাগার স্থাপন করা হবে। এবং শীতলক্ষা থেকে পানি এনে তা শোধন করে সরবরাহ করা হবে। ঢাকার পানি সরবরাহ নেটওয়ার্ক জরুরী ভিত্তিতে মেরামত করা হবে।
বাংলাদেশ একটি বৃষ্টিবহুল দেশ। বছরে অন্তত তিন থেকে চার মাস আমাদের এখানে বৃষ্টি হয়। আমি নির্বাচিত হলে, ঢাকায় বৃষ্টির পানি সংরক্ষনের কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া হবে। ঢাকার খাল-বিল, নদী উদ্ধার করে ভুউপরস্থ পানি ব্যবহারের ওপরে জোড় দেয়া হবে। পানির অপচয়রোধে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করা হবে।
৩. নদীদূষণ:
ঢাকার নদীদূষণ এতটাই ভয়াবহ যে, এই নদীতে কোন ধরণের প্রাণি বেঁচে থাকার মত অবস্থা নেই। জলাধারের প্রতি লিটারে অন্তত ৫ মিলিগ্রাম দ্রবীভূত অক্সিজেন না থাকলে সেখানে কোন প্রাণি বেঁচে থাকতে পারেনা। অথচ ঢাকার নদ-নদীতে দ্রবীভূত অক্সিজেনের মাত্রা ০.১৫এর মত। ঢাকার নদীর পানি এতো বেশী দুষিত ও দুর্গন্ধময় যে তার পাশ দিয়ে কোন মানুষ যেতে পারে না।
এমত অবস্থায় ঢাকার নদীগুলোকে বাঁচিয়ে রাখতে কঠিন বর্জ পদার্থ পানিতে মিশতে দেয়ার পথ বন্ধ করা হবে। মানব বর্জ ব্যবস্থার জন্য আলাদা ভাবে ট্রিটমেন্ট প্লান বাস্তবায়ন করা হবে। বুড়িগঙ্গার উত্তর অংশ, তুরাগ ও বালূ নদীকে উদ্ধার করে পানি সংরক্ষণ করা হবে। বুড়িগঙ্গার উত্তর পাড় দিয়ে সব ধরণের পয়োবর্জ্য ও শিল্পবর্জ্য ডাইভারশন সুয়ারেজ লাইনের মাধ্যমে হাতিরঝিলের অনুকরণে নদীতে নিক্ষেপ না করে পাগলা সুয়েজ ট্রিটমেন্ট প্লান্টে নিয়ে যাওয়া হবে। জলাভুমি ও নদীতে কঠিন বর্জ নিক্ষেপ বন্ধ করা হবে। ঢাকা উত্তর সিটি প্রয়োজনীয় সুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্লান্ট স্থাপন করা হবে।
৪. শব্দদূষণ:
আন্তর্জাতিক আইন ও মান অনুযায়ী শব্দের সহনীয় মাত্রার পরিমাণ ৪০-৪৫ ডেসিবল। অথচ পরিবেশ সংগঠন পবার মতে, রাজধানীর নিরব এলাকাতেও দিবাকালীন শব্দের মাত্রা ৭৫-৯৭ ডেসিবল। আর বাণিজ্যিক এলাকায় ৭১ থেকে ১০৭ ডেসিবল। এই উচ্চ মাত্রার শব্দ দূষণের কারণে উচ্চ রক্তচাপ, অনিদ্রা, শ্রবণশক্তি হ্রাস, মনোসংযোগ কমে যাওয়া, মাথা ব্যাথা ও মাথাধরার মতো জটিলতায় ভুগছে নগরবাসী। শব্দ দূষণ রোধে ঢাকার যানবহনে হাইড্রোলিক হর্ন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হবে। ঢাকায় মাইক ও শব্দযন্ত্র ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করা হবে এবং ২০০৬ এর শব্দ দূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা এর আলোকে নগরির জন্য শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা প্রণয়ন করা হবে।
৫.দুষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ড :
ঢাকার দূষণ বহুমাত্রিক। এর ব্যাপকতাও বিস্তৃত। গত ২৩ জানুয়ারীতে প্রকাশিত প্রতিবেদন বলছে, ঢাকার দূষনের সাথে আন্তঃসীমান্ত বাযুদূষণও দায়ী। তাই ঢাকাকে দূষণমুক্ত করতে হলে প্রয়োজন ধারাবাহিক ও সমন্বিত কার্যক্রম। সেজন্য “দূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ড” প্রতিষ্ঠা করা হবে। বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগী, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি, সামাজিক নেতৃবৃন্দ ও বিশেষজ্ঞদের নিয়ে এই বোর্ড গঠিত হবে।
৬. খাদ্যে ভেজাল:
গত ২ মে’১৯ বাংলাদেশ ষ্টান্ডার্ড এন্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই) এক প্রতিবেদনে জানায়, তারা খোলা বাজার থেকে ২৭ ধরণের ৪০৬টি খাদ্য পণ্যের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করেছে। এর মধ্যে ৫২টি নিম্নমানের ও ভেজালপণ্য রয়েছে। যদিও এটা দেশব্যাপী করা তারপরেও এর মাধ্যমে ঢাকার খাদ্যে ভেজালের ভয়াবহতা বোঝা যায়।
আমি নির্বাচিত হলে, ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের নিজস্ব মান নিয়ন্ত্রন ল্যাবরেটরি স্থাপন করা হবে। ঢাকা উত্তর সিটিতে কোন পণ্য বজারজাত করতে হলে, সিটি কর্পোরেশন থেকে অনুমোদন নিতে হবে। ওয়ার্ড কমিশনারদের মাধ্যমে প্রতিটি ওয়ার্ডে নিয়মিত হোটেল, দোকান ও বাজারে অভিজান পরিচালনা করা হবে এবং মাসিক প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে।
৭. পরিকল্পিত ঢাকা:
ঢাকা ৪০০ বছরের একটি ঐতিহ্যবাহী শহর। বর্তমানে ঢাকা পৃথিবীর সর্বোচ্চ জনঘনত্বের শহরে পরিণত হয়েছে। নিপোর্ট-এর তথ্যানুযায়ী প্রতিদিন ঢাকা শহরে জনসংখ্যা বাড়ছে ১৪১৮ জন করে। ঢাকার প্রতি বর্গকিলোমিটারে গড়ে ৪৫ হাজার মানুষ বাস করে। ফলে ঢাকা শহর প্রতিদিনই দৈর্ঘ্য ও প্রস্থে বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে তা কোন ধরণের সমন্বিত পরিকল্পনা ছাড়াই। ১৯৫৯ সালে ঢাকা শহরের জন্য ২০ বছর মেয়াদী মাস্টার প্ল্যান তৈরি করা হয়। তখন তা ছিল ১৫ লাখ মানুষের জন্য। এখন ঢাকার জনসংখ্যা প্রায় ২ কোটি। কিন্তু ১৫ লাখ মানুষের জন্য করা পরিকল্পনা দিয়েই ঢাকা চলছে। ২০১০ সালে ড্যাপ প্রণয়ন করা হলেও তা বাস্তবায়ন করা যায়নি।
আমি মেয়র নির্বাচিত হলে স্মার্ট শহরের আদর্শমান অনুসারে ঢাকায় ৩০% খোলা জায়গা, ২০% রাস্তা, ১৫% জলাশয় ও ২৫% সবুজায়ন নিশ্চিত করতে একমাসের মধ্যেই স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয়ের সাথে পরামর্শকরে নগরের সাথে সম্পৃক্ত সকল মন্ত্রনালয় ও নগরবিদদের নিয়ে একটি পরিকল্পনা করে কার্যকর সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
৮. যানজট :
বিশ্ব ব্যাংক -এর ২০১৭ সালের এক তথ্যানুযায়ী যানজটের কারণে রাজধানী ঢাকায় প্রতিদিন ৩২ লাখ কর্মঘন্টা নষ্ট হয়। একই কারণে বছরে ৩০ হাজার কোটি টাকা মূল্যের সময় নষ্ট হয়। বুয়েটের তথ্যানুযায়ী ঢাকা
শহরে যানজটের গতি ঘন্টায় মাত্র ৫ কি.মি.। ২০২৫ সালে যা ৪ কিমিতে নেমে আসতে পারে।
বিআইডিএস-এর জরিপ মতে ৯১.৫% মানুষ যানজটকে ঢাকার প্রধান সমস্যা বলে চিহ্নিত করেছে।
ষ্ট্র্যাটেজিক ট্রান্সপোর্ট এসটিপির হিসাব মতে, বর্তমানে ঢাকার ১৫% যাত্রী ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহার করে অথচ তারা রাস্তার ৭০% এর বেশি জায়গা দখল করে রাখে।
ট্রাফিক বিভাগের হিসাব মতে সড়কের কমúক্ষে ৩০% জায়গা দখল করে থাকে অবৈধ পার্কিং বা অন্য দখলদারেরা। ঢাকার যানজট সমস্যার সমাধান কল্পে দীর্ঘমেয়াদী মধ্য মেয়াদী ও স্বল্পমেয়াদী পরিকল্পনা ও কার্যক্রম হাতে নেয়া হবে। স্বল্প মেয়াদী পরিকল্পনার মধ্যে পরিবহন খাতে শৃঙ্খলা স্থাপন করা, ফ্রাইঞ্চাইজিভিত্তিক বাস সার্ভিস চালু করা হবে। নির্দিষ্ট দিনে নির্দিষ্ট নাম্বারের ব্যক্তিগত গাড়ি রাস্তা থেকে নিষিদ্ধ করা হবে। সড়ককে অবৈধ পার্কিং ও দখলদারদের হাত থেকে উদ্ধার করা। মধ্য মেয়াদী ও দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনার জন্য সরকারের অন্যান্য সংস্থা ও বিশেষজ্ঞদের সাথে সমন্বয় করে কার্যকর পরিকল্পনা করা হবে।
৯. ওয়ার্ড ভিত্তিক পরিকল্পনা :
ঢাকা উত্তরের ৫৪টি ওয়ার্ডের প্রতিটি নিয়ে স্থানীয়দের সাথে পরামর্শ করে প্রতি ওয়ার্ডের জন্য আলাদা আলাদা পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা করা হবে এবং সেই অনুযায়ী উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালিত হবে। ওয়ার্ডে কোন ভাঙ্গা রাস্তা থাকবে না ইনশা আল্লাহ। প্রতিটি ওয়ার্ডে মানুষ হিসেব করে খোলা জায়গা, মাঠ, ঈদগাহ, কমিউনিটি সেন্টার, মশক নিয়ন্ত্রন কেন্দ্র, পানি ও গ্যাস সরবরাহ লাইন স্থাপন, ইউটিলিটি টানেল, প্রয়োজনিয় সেবা কর্মী, স্বাস্থ কেন্দ্র, মাতৃসদনসহ জরুরী সকল সেবা প্রদানের নিশ্চয়তা দিয়ে পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা করা হবে।
১০. বিল্ডিং কোডের যথাযথ অনুসরণ :
আমি নির্বাচিত হলে, আগামী ৬ মাসের মধ্যে ঢাকা উত্তরের প্রত্যেকটি বিল্ডিংকে আলাদা আলাদা ভাবে পর্যবেক্ষণ করে বিল্ডিংগুলোর সমস্যা চিন্হিত করা হবে এবং সেই অনুযায়ী প্রতিরোধ ব্যবস্থা নেয়া হবে। প্রত্যেকটি বিল্ডিংকে দুর্যোগ সহিঞ্চু করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বাধ্য করা হবে এবং নতুন নির্মানাধীন প্রতিটি বিল্ডিংকে বিল্ডিং কোড মানতে বাধ্য করা হবে।
১১. দুর্যোগ সহিঞ্চু নগর :
ঢাকায় আগুন একটি ভয়ঙ্কর মার্মান্তিক দুর্যোগ। একই সাথে ঢাকা ভুমিকম্প ঝুকিতে রয়েছে। ঢাকাকে দুর্যোগ সহিঞ্চু করে গড়ে তুলতে মসজিদভিত্তিক দুর্যোগ প্রশমনকেন্দ্র গড়ে তোলা হবে। ঢাকার নাগরিকদের জন্য দুর্যোগ মোকাবিলার প্রশিক্ষণ বাধ্যতামুলক করা হবে। এছাড়াও বিশেষজ্ঞ মতামত নিয়ে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
১২. বাসা ভাড়া
ঢাকার ৭০% মানুষ ভাড়া বাসায় থাকেন। ঢাকার বাসা ভাড়া নিয়ে কোন বিধিমালা নাই। কোন ধরণের নিয়ন্ত্রণও নেই। চরম স্বেচ্ছাচারী ভাবে এই অঙ্গন চলছে। প্রতিবছর বাসাভাড়া বেড়েই চলছে। নাগরিককে তার আয়ের ৩০% এর বেশী ব্যয় করতে হচ্ছে বাসা ভাড়ার পেছনে। আমি মেয়র নির্বাচিত হলে, ঢাকার বাসা ভাড়ার সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন করা হবে। এবং ২০% ভাড়া কমিয়ে দেয়া হবে।
১৩. স্মার্ট পার্কিং :
ঢাকায় যানজট থেকে মুক্তির জন্য ঢাকা উত্তরের সর্বত্র স্মার্ট পার্কিং এর ব্যবস্থা করা হবে। স্মার্ট পার্কিং হলো, আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে অল্প স্থানে বেশি গাড়ি পার্কিং করা। পাইলট প্রকল্প হিসেবে ঢাকার অন্তত ৫টি স্থানে স্মার্ট পার্কিং এর ব্যবস্থা করা হবে। পর্যায়ক্রমে সমগ্র ঢাকাকেই স্মার্ট পার্কিং এর আওতায় আনা হবে।
১৪. ফুটপথ :
ঢাকার অধিকাংশ ফুটপাত দখল হয়ে গেছে। অবশিষ্টগুলোতেও নেই নিরাপত্তা। নেই পর্যাপ্ত লাইটিং ব্যবস্থা। যার ফলে পথচারীরা যত্রতত্র রাস্তা ব্যবহারের ফলে প্রতিনিয়ত যানজট বেড়ে চলছে এবং দুর্ঘটনার সম্মূখিন হচ্ছে নগরবাসী। আমরা দখলকৃত ফুটপাতগুলো উদ্ধার করে জনসাধারনের জন্য উন্মুক্ত করবো এবং ফুটপাতে জীবিকা নির্বাহী হকারদের নির্দিষ্ট স্থান পুনর্বাসন করবো। ফুটপথকে অধিক নিরাপদ ও আরামদায়ক রাখার জন্য ফুটপাতের ধারে সবুজায়ন করা হবে এবং রাতে পর্যাপ্ত লাইট ব্যবস্থা রাখা হবে। এছাড়া প্রতি ১ কিলোমিটার অন্তর একটি বিশ্রামাগার তৈরী করা হবে।
১৫.পাবলিক টয়লেট
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে মোট ওয়ার্ডের সংখ্যা ৫৪। এর মধ্যে নতুন ওয়ার্ড ১৮টি। ১৯৬ দশমিক ২২ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই সিটি করপোরেশনে গণশৌচাগার আছে মাত্র ২৫টি। লক্ষ লক্ষ মানুষ বিশেষত নারীরা ভয়ংকর বিব্রত পরিস্তিতির শিকার হন। এই অবস্থা থেকে নগরবাসীকে মুক্ত করতে প্রতি এক কিলোমিটারে একটি করে গণশৌচাগার নির্মান করা হবে।
১৫. মশক নিধন:
২০১৯ এ জনপ্রতিনিধিদের দূর্নীতি, অযোগ্যতা ও দায়িত্বে অবহেলার কারণে ডেঙ্গু মহামারিতে রূপ নিয়েছিলো। ২০১৯ এর ১লা জানুয়ারী থেকে ১৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত রাজধানীতে ৫১ হাজার ৬৮০ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। ঢাকার বাহিরে ৪৯ হাজার ৪৩৩ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হন। দেশব্যাপী ডেঙ্গু মূলত ঢাকা থেকে ছড়িয়েছে এবং সরকারী রক্ষণশীল হিসেবেই ১৪১ জন ডেঙ্গুতে নিহন হয়েছে। (জাগো নিউজ ২৪. কম, ১৮ ডিসেম্বর-২০১৯) যদিও বেসরকারী হিসেব মতে এই মৃত্যুর সংখ্যা আরো বেশি। এই হাজার হাজার মানুষের ডেঙ্গু আক্রান্ত হওয়া, শত শত মানুষ মারা যাওয়া এবং শহর জুড়ে দীর্ঘদিন ধরে আতংকের পরিবেশ সৃষ্টির পুরো দায় সিটি কর্পোরেশনের। ৩১ জুলাই প্রথম আলোর প্রতিবেদন বলছে, “সিন্ডিকেটের মাধ্যমে অকার্যকর ঔষুধ কিনেছে সিটি কর্পোরেশন।“ মশা নিয়ে মেয়রদের অবহেলা ও মানুষের মুত্যু নিয়ে অজ্ঞতার ভান হতাশ করেছে গোটা জাতিকে।
মশক ও ক্ষতিকর কীটপতঙ্গ নিয়ন্ত্রকে মেয়র হিসেবে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হবে। কীট নিয়ন্ত্রণ বিভাগকে দূর্নীতিমুক্ত করা হবে। মশক ও ক্ষতিকর কীটপতঙ্গ নিয়ন্ত্রনে প্রতিটি মহল্লায় ধর্মীয় ও সামাজিক নেতৃবৃন্দের সমন্নয়ে মশক নিয়ন্ত্রণ কমিটি করা হবে এবং তাদের মাধ্যমে প্রতিদিনই প্রতি মহল্লায় পরিচ্ছন্নতা ও মশক নিধন কার্যক্রম পরিচালিত হবে।
১৭. রাস্তাঘাট:
স্বল্প মেয়াদে ঢাকার রাস্তাঘাট খোড়াখোড়ি বন্ধ করতে বছরের শুরুতে নগরির সাথে সম্পৃক্ত সকল সংস্থাকে নিয়ে বৈঠক করে সমন্বয় করা হবে। আর দীর্ঘ মেয়াদে ঢাকায় ইউনিলিটি টানেল তৈরী করা হবে। এবং সকল সেবা সেই টানেল দিয়ে নেয়া হবে। ফলে রাস্তা খোড়াখোড়ির সমস্যা থেকে নগরবাসী মুক্তি পাবে সেই সাথে নতুন সম্পৃক্ত সকল ওয়ার্ডের এবং নগরির সকল রাস্তা ৬মাসের মধ্যে মেরামত করা হবে।
১৮. বস্তি:
ঢাকা শহরে ২০১৪ সালের শুমারি অনুযায়ী বস্তির সংখ্যা মোট ৩ হাজার ৩৯৪ টি। প্রায় সাড়ে ২২ লক্ষ মানুষ এসব বস্তিতে বসবাস করে। গত ৬ বছরে এই সংখ্যা আরো বেড়েছে নিশ্চয়ই। সরু পথ, অন্ধকার খুপড়ী, নোংরা গোসলখানা ও টয়লেট আর আবর্জনা ইত্যাদি নিয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করা এ বস্তিবাসীদের নিয়ে সিটি কর্পোরেশন কোন কাজ করেনা। ২রা সেপ্টেম্বর’১৯ এ প্রথম আলোর প্রতিবেদন অনুসারে ডিএনসিসির এলাকাভুক্ত কড়াইল, ভাষানটেক ও চলন্তিকা বস্তিকে ঘিরে ২৪টি সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। এ সব বস্তি থেকে মাসে তারা দুই কোটি আটাশি লাখ টাকা আয় করে। এ সিন্ডিকেটবাজি রোধ করতে ডিএনসিসির মেয়র কার্যত কোন ভূমিকা নেননি। আমি মেয়র নির্বাচিত হলে ঢাকার বস্তিগুলোকে প্রাথমিকভাবে চাঁদাবাজ ও মাস্তানদের হাত থেকে নগর কর্তৃপক্ষের অধিনে নেয়া হবে এবং সেখানে প্রয়োজনিয় মানবিক সেবা প্রদান করা হবে। এবং দীর্ঘ মেয়াদের তাদের পুনর্বাসনের কাজ করা হবে।
১৯. মাদক:
ঢাকায় বর্তমানে মাদকসেবীর সংখ্যা দশ লক্ষাধিক। ঢাকার একজন মাদকসেবী মাসে গড়ে ১১,৩৩৪ টাকা খরচ করে। ঢাকায় শিশু মাদকাসক্তের সংখ্যা ১০.৭ শতাংশ। যা দেশের মধ্যে শীর্ষে। ঢাকাকে মাদক মুক্ত করতে প্রতিটি ওয়ার্ডে ধর্মীয়, সামাজিক ও বিশেষ নাগরিক নেতৃবৃন্দের সমন্বয়ে মাদক নির্মূল কমিটি করা হবে এবং প্রতিনিয়ত মাদক বিরোধী অভিযান পরিচালিত হবে।
২০. খাল:
ঢাকায় এক সময় শতাধিক খাল ছিল। বর্তমানে ৪৮টি খালের কথা স্বীকার করা হলেও ২৬টি কোন রকমে টিকে আছে। যে ২৬টি টিকে আছে তারও বেশির ভাগ এলাকা দখল হয়ে গেছে। ঢাকার জলাবদ্ধতার এটাই অন্যতম কারণ। আমি মেয়র নির্বাচিত হলে, সবধরনের রাজনৈতিক চাপ উপেক্ষা করে ঢকার দখলকৃত আব্দুল্লাহপুর, দিয়াবাড়ি, দেবুর খান, কল্যাণপুর , গোবিন্দপুর , রামপুরা ও বাড্ডা খাল উদ্ধার করে সেখানে বর্ষার পানি মওজুদ করা হবে। কোন শিল্প কারখানার বর্জ্য কোন খাল ও নদীতে পড়তে দেয়া হবে না।
২১. মাঠ:
বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থার তথ্য অনুযায়ী, প্রতিটি মানুষের জন্য ৯ বর্গমিটার খোলা জায়গা প্রয়োজন। ঢাকায় আছে মাত্র ১ বর্গমিটার। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) এর তথ্য মতে জনসংখ্যার ভিত্তিতে ঢাকার ১ হাজার ৩০০ খেলার মাঠ থাকার কথা। সেখানে আছে মাত্র ২৩৫টি। অর্থাৎ ঘাটতি ১ হাজার ৭১ টি। যেগুলো আছে তার মাত্র ৪২ টিতে সাধারণের প্রবেশের অধিকার আছে। ১৬টি সরকারি মাঠ বিভিন্নভাবে দখল হয়ে গেছে। রাজউকের মতে, ঢাকায় দখল হওয়া মাঠ ও পার্কের পরিমাণ ৬ হাজার ৯০০ একর। বিআইটির তথ্য মতে, ঢাকা সিটি উত্তরে ৩৬টি ওয়ার্ডে ৬১০টি মাঠের ঘাটতি আছে। এই খাতটি পুরনে দখলকৃত মাঠ ও পার্ক ২মাসের মধ্যে উদ্ধার করা হবে এবং প্রতিটি ওয়ার্ডে হিসেব করে মাঠ ও পার্ক স্থাপন করা হবে।
২২. বর্জ্য ব্যবস্থাপনা:
বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সিটি কর্পোরেশনের প্রধানতম কাজ। চলতি বছরে শুধু ডিএনসিসি এলাকাতে দৈনিক ৫ হাজার ২০০ টন বর্জ্য তৈরি হবে। প্রতি বছর প্রায় ২১.৯৩ শতাংশ বর্জ্য বৃদ্ধি পায়। এই বিপুল বর্জ্যরে ৭৮ শতাংশই হলো অর্গানিক বর্জ্য। যার কোন সঠিক ব্যবস্থাপনা নেই। এই বর্জ্য পঁচে দুর্গন্ধ ছড়ানোর পাশাপাশি মিথেন গ্যাস তৈরি করে। এই গ্যাস কার্বনডাই অক্সাইডের চেয়েও ২১ গুণ বেশি বিপদজনক। সিটি কর্পোরেশন প্রতি বছর গৃহকরের ৩ শতাংশ পরিচ্ছন্নতা বাবদ নিলেও তারা বাসাবাড়ি থেকে সরাসরি বর্জ্য সংগ্রহ না করে সিন্ডিকেটের হাতে ছেড়ে দেয়। সিন্ডিকেট অনেক ক্ষেত্রে বাসা প্রতি ৫০০ টাকা পর্যন্ত আদায় করে। তারা রাজধানীবাসীকে জিম্মি করে বছরে অনন্ত ৪৫০ কোটি টাকার ময়লা বাণিজ্য করে। গত ৪ ডিসেম্বর দুদকের তদন্ত দল জানায়, বর্জ্য সংগ্রহে প্রতি ডিএনসিসির কার্যত কোন নিয়ন্ত্রণ নেই। ডিএনসিসিতে ২০২১ নাগাদ ৫ হাজার ২০০ টন বর্জ্য তৈরি হবে। এই বর্জ্য আমরা সম্পদ বিবেচনায় উৎপাদনশীল টেকসই বর্জ্য ব্যবস্থাপনার অংশ হিসেবে ভরাব জ ংঃধঃধমু তে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার আওতায় নিয়ে আসবো। রিডিউস, রিইউজ, রিকভার, রিপারপাজ ও রিসাইকেল নীতিকে সামনে রেখে ঝঃৎধঃবমরপ বিংঃ সধহধমবসবহঃ ব্যবস্থা করা হবে।
আপনারা জানেন, ঢাকার বর্জ্য ব্যবস্থাপনা মূলত চার স্তর বিশিষ্ট।
১. বর্জ্যরে উৎস ২. বর্জ্যরে বিন ও ট্রান্সফার ষ্টেশন ৩. বর্জ্য সংগ্রহ ও পরিবহন ৪. চূড়ান্ত ডিসপোজাল। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, টেকসই বর্জ্য ব্যবস্থাপনা করতে হলে তিনটি শর্ত পূরণ হওয়া দরকার। ১. ব্যবহৃত টেকনোলজির কার্যকারিতা ২. ব্যবস্থাপনায় আর্থিক স্বয়ঃসম্পূর্ণতা ৩. ব্যবস্থাপনার প্রতি স্তরের পরিবেশ রক্ষায় সচেতনতা। মেয়র হিসেবে এই বিষয়গুলো নিশ্চিত করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো। তরল বর্জ্যরে ক্ষেত্রে উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের (ইটিপি) ইনফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্লান্ট এর ব্যবহার নিশ্চিত করতে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
২৩. জলাবদ্ধতা:
সিটি কর্পোরেশনের দূর্নীতি, অদক্ষতা, দায়বদ্ধহীনতা ও সেবাদানকাী প্রতিষ্ঠানগুলোর সমন্বয়হীনতা এবং দায় এড়ানোর মানসিকতার কারণে নগরবাসীকে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। গত ১ অক্টোবর মঙ্গলবার ৪৭ মিলিমিটার বৃষ্টিতেই ঢাকা শহর ডুবে যায়। বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ক্রটি, নালা ও খাল নদী পর্যন্ত পানি যাওয়ার প্রক্রিয়াটি নির্বিঘ্ন না হওয়া এবং পর্যাপ্ত জলাধার না থাকায় জলাবদ্ধতা বাড়ছে। জলাবদ্ধতা নিরসনে সিটি কর্পোরেশন ও ওয়াসা ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে। ঢাকা ওয়াসার অধীনে ৩৮৫ কি.মি. গভীর নর্দমা ১০ কি.মি. বক্স কালভার্ট, ৮০ কি.মি. খাল এবং ৩৬০ কি.মি. পানি নিষ্কাশন নেটওয়ার্ক রয়েছে। অন্য দিকে দুই সিটি কর্পোরেশনের অধীনে ২০০০ কি.মি. নর্দমা, ১২০০ কি.মি. ভূগর্ভস্থ পাইপ লাইন, তম্মধ্যে সিটি উত্তরের অধীনে ৭০০ কি.মি. পাইপ লাইন ১৮ কি.মি. নর্দমা ২০০ কি.মি. পানি নিষ্কাশন নেটওয়ার্ক এবং ৪.৫ কি.মি. বক্সকালভার্ট রয়েছে। জলবদ্ধতা নিরসনে স্বল্প মেয়াদে ওয়াসার সাথে সমন্বয় করে বিদ্যমান পানি নিষ্কাষন ব্যবস্থাকে যথাযথ ব্যবহার করা হবে। পানি নিষ্কাশন নেটওয়ার্ক কে পরিষ্কার করা হবে। দীর্ঘ মেয়াদী কার্যক্রম হিসেবে ঢাকার খাল-বিল ও জলাশয় উদ্ধার করাসহ নগর বিদদের পরামর্শ মোতাবেক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
২৪. নগরস্বাস্থ্য:
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনে মাত্র ৫টি মাতৃসদন, ২৭টি নগর স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও ৫৪টি স্যাটেলাইটকেন্দ্র রয়েছে। প্রায় এক কোটি নগরবাসীর জন্য এ স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র কতটা অপ্রতুল তা বলার অপেক্ষা রাখে না। ৮৬টি স্বাস্থ্যকেন্দ্র দিয়ে এক কোটি মানুষকে সেবা দেয়া এক কথায় অবাস্তব এবং নগরবাসীর সাথে উপহাস করা। সাথে এ কথাও সত্য যে, এ নামমাত্র সেবা কেন্দ্রগুলোতে ডাক্তার থাকে না। ঔষধ থাকে না। এই অবস্থা পরিবর্তনে আমরা ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের প্রতিটি ওয়ার্ডে অন্তত একটি করে মাতৃসনদ ও একটি করে নগর স্বাস্থ্য কেন্দ্র স্থাপন করবো এবং সেই সব মাতৃসনদ ও নগর স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ডাক্তার, নার্সের উপস্থিতি নিশ্চিত করা হবে।
২৫. সিটিজেন চার্টার :
সিটিজেন চাটার হলো, সরকারী অফিসে একজন নাগরিক কি কি সেবা কত দিনের মধ্যে কার কাছে কিভাবে পাবেন তার ঘোষণা। আমি নির্বাচিত হলে, সিটি কর্পোরেশন এর প্রতিটি অফিসে সিটিজেন চার্টারের প্রকাশ্য প্রদর্শণ বাধ্য করা হবে এবং তার যথাযথ বাস্তাবায়ন নিশ্চিত করা হবে।
২৬. হকার ও ছিন্নমূল শিশুদের পুনর্বাসন:
হকারদের স্থায়ী পুনর্বাসন করা হবে এবং ভ্রাম্যমান হকারদের সিটি কর্পোরেশন থেকে পরিচয় পত্র প্রদান করা হবে এবং ফুটপাতে হকারদের থেকে চাঁদাবাজী বন্ধ করা হবে। রাস্তার ধারে যত্রতত্র বস্তিবাসীদের জানমালের নিরাপত্তা জোরদার করা হবে। ঢাকায় বিভিন্ন রেল স্টেশনে ছিন্নমূল শিশুরা মানবেতর জীবন জাপন করছে। শিক্ষা ও পরিবেশের অভাবে তারা মাদকাসক্ত হয়ে এবং বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজে অংশ নিয়ে জনজীবনে শান্তি ও নিরাপত্তা বিঘ্নত করছে। এ সমস্ত ছিন্নমূল শিশুদেরকে শিক্ষা ও সমাজবোধ জাগ্রত করার জন্য শিশু শিক্ষা ও শোধনাগার প্রতিষ্ঠা করা হবে।
২৮. নারীবান্ধব গণপরিবহণ:
নারীদের সম্মান, মর্যাদা ও নিরাপত্তা রক্ষায় ঢাকায় গণপরিবহনে নারীদের জন্য বিশেষ পরিবহন সার্বিস ব্যবস্থা করা হবে এবং উঠা নামার জন্য নির্দিষ্ট বাস স্টপ ব্যবহার করা হবে। গণপরিবহনে নারীদের নিরাপত্তা বিধান নিশ্চিত করা হবে।
২৯. নাগরিকের নৈতিক উন্নয়ন:
বাংলাদেশ সভ্যতার এক অবিচ্ছেদ্য অংশ বিশেষ করে দেশের সভ্যতা সংস্কৃতি নির্মাণের মূল জায়গা হলো ঢাকা সিটি। এটা সভ্যতার অন্যতম নিদর্শণ। পারষ্পরিক সম্মানবোধ অপরের প্রতি সহানুভতি প্রদর্শণ মেহমানদারী, মুসাফিরের পথ দেখানো ঢাকা শহরের পুরানো ঐতিহ্য। ঢাকা শহরের বাঙ্গালির চিরায়াত ইতিহাস, ঐতিহ্য, সম্মানবোধের ধারণা, সমাজিক, সম্পর্কের উন্নয়নের মাধ্যমে পরিবারের প্রতি দায়িত্বশীল আচরণ ও নৈতিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বিবাহ বিচ্ছেদ কমিয়ে আনা হবে। বয়ষ্কদের পরিবারে সম্মানের আসনে রাখার যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
৩০. যাকাত বোর্ড : মহান আল্লাহ তায়ালার নির্দেশনা অনুসারে ধনবান ব্যক্তিদের সম্পদের ২.৫% যাকাত হিসেবে প্রদান করতে হয়। প্রত্যেক মুসলমানের ওপরে তা ফরজ। একই সাথে এই সম্পদ গরীবদের অধিকার বলে ইসলাম নির্দেশনা দিয়েছে।
ঢাকা শহরে যাকাত ফরজ হওয়া মানুষের সংখ্যাও যেমন অনেক তেমনি অভাবী মানুষের সংখ্যাও অনেক। জাকাতের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে একদিকে যেমন মুসলিম ধনীদের দায়মুক্ত করা যায় তেমনি অভাবীদের অভাব পুরণ করা যায়।
আমি মেয়র নির্বাচিত হতেল, ঢাকা উত্তর সিটিতে জনপ্রতিনিধি, সাবেক বিচারপতি ও উলামায়ে কেরামের সমন¦য়ে যাকাত বোর্ড গঠন করা হবে। যার মাধ্যমে সুষ্ঠু যাকাত সংগ্রহ ও বিতরণ ব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে।
৩১. সামাজিক নিরাপত্তার বলয় তৈরী :
-হিজড়া
বাংলাদেশে সরকারী হিসেবে ১০ হাজারের মতো হিজড়া জনগোষ্ঠি আছে। তাদের অধিকাংশই ঢাকায় বসবাস করেন। নগরবাসী হিজড়াদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে থাকে। অন্য দিকে হিজড়ারা বলছে, তারা নিরুপায়। এমতাবস্থায় হিজড়া জনগোষ্ঠিকে নিয়ে বাস্তবমুখি কাজ করা দরকার বলে আমি মনে করি। সেজন্য আমি নির্বাচিত হলে হিজড়া পুনর্বাসন কন্দ্রে গড়ে তোলা হবে। তাদেরকে প্রশিক্ষণ দিয়ে কর্মক্ষম করে সমাজের মুল ধারায় সম্পৃক্ত করে দেয়া হবে।
-ভিক্ষুক :
সংসদের তথ্যানুসারে বাংলাদেশে আড়াই লক্ষ্য ভিক্ষুক। যাদের অধিকাংশই ঢাকায় বসবাস করে। আমি মেয়র নির্বাচিত হলে, ঢাকার ভিক্ষুক, পাগল, লাওয়ারিস ও পথবাসী মানুষদের জন্য পুনর্বাসন কেন্দ্র গড়ে তেলা হবে। কর্ম অক্ষমদের ভরনপোষন সিটি কর্পোরেশন বহন করবে।
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ভোটারগণের প্রতি আমার আবেদন:
সম্মানিত সচেতন, উন্নয়নকামী ভোটারবৃন্দ!
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনে দীর্ঘদিন ধরে জমে থাকা জঞ্জাল, সীমাহীন অনিয়ম, পরিকল্পিত দুর্ভোগ, মাত্রাতিরিক্ত দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি এবং উন্নয়নের কর্মকাণ্ডে ক্ষমাতাশীলদের অনৈতিক আধিপত্য। যা নগরবাসীকে বিষিয়ে তুলেছে। জনমনে শান্তি নেই, স্বস্তি নেই; মানবজীবনের নিরাপত্তা নেই। নগরজীবনে স্বস্তি, শান্তি ও নিরাপত্তা ফিরিয়ে আনার জন্য আসন্ন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
মনে রাখবেন, আপনার সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করছে আগামী দিনের ঢাকা নগরীর ভবিষ্যৎ। আপনারা সম্মিলিতভাবে ঢাকা উত্তর সিটির সমস্যার সমাধান এবং বাসযোগ্য, টেকসই, উন্নত এবং অধুনিক সিটি হিসেবে গড়ে তুলতে চাইলে, আমি শেখ ফজলে বারী মাসউদ নগরবাসীর অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য মেয়র হিসেবে দায়িত্ব নিতে সর্বদা প্রস্তুত আছি। এ মহান কাজে আমি আপনাদের সহযোগিতা চাই, দোয়া চাই; আপনার মূল্যবান ভোটটি হাতাপাখা মার্কায় চাই। আমি ইশতেহারে যে সকল কথা উল্লেখ করেছি আপনারা আমার পাশে থাকলে, সহযোগিতা করলে, জীবনের বিনিময়ে হলেও আমি তা বাস্তবায়ন করবো, ইনশাআল্লাহ।
পরিশেষে, সকলের প্রতি আমার বিনীত আবেদন, আমাকে হাতপাখা মার্কায় আপনাদের মহা মূল্যবান ভোট দিয়ে ঢাকা উত্তর সিটির সার্বিক উন্নয়ন ও দূষণমুক্ত স্মার্ট ঢাকা গড়ার সুযোগ দিন।
আমি মহান আল্লাহর নিকট সকলের সুস্বাস্থ, দীর্ঘায়ু, শান্তি ও মঙ্গল কামনা করছি।