দেশের বর্তমান রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক অবস্থা সংকটাপন্ন বলে মন্তব্য করেছেন ‘ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ’-এর আমির ও চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম। দেশের সার্বিক অবস্থা বিশ্লেষণ করতে গিয়ে তিনি এ মন্তব্য করেন। এ অবস্থায় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন কোনো দলীয় সরকারের অধীনে হতে পারে না বলেও মনে করেন তিনি। দেশের বর্তমান রাজনৈতিক, অর্র্থনৈতিক, সামাজিক অবস্থা, বিগত দুটি নির্বাচন ও আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন, আন্দোলন, জোট গঠনসহ নানা প্রসঙ্গে দৈনিক আমাদের সময়ের সঙ্গে সম্প্রতি খোলামেলা আলাপ করেন এবং নানা প্রশ্নের জবাব দেন রেজাউল করীম।
দেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বিশ্লেষণ করতে গিয়ে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির বলেন, ‘এক কথায় বলা যায়- দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি সংকটাপন্ন। বিশেষ করে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন দলীয় সরকারের অধীনে হবে, নাকি নির্দলীয় সরকারের অধীনে হবে- এটি এখন মুখ্য বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভোট ইভিএমে হবে, নাকি ব্যালটে- এ বিতর্কও আছে। জাতীয় নির্বাচনের ক্ষেত্রে এ দুটি মৌলিক বিষয়কে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক সংকট সৃষ্টি হয়েছে।’
দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক অবস্থা সম্পর্কে রেজাউল করীম বলেন, দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক অবস্থাকে বিশেষজ্ঞরা সংকটাপন্ন বলেছেন। আরও বিস্তারিত আমার চেয়ে দেশের অর্থনীতিবিদরা ভালো জানেন, যা আপনাদের মাধ্যমে গণমাধ্যমে প্রকাশিত হচ্ছে।
দেশের চলমান পরিস্থিতিতে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো নিজ নিজ দল ও জোটের নীতি আদর্শ অনুযায়ী কর্মসূচি পালনের চেষ্টা করে যাচ্ছে বলে মনে করেন ইসলামী আন্দোলনের আমির। ২০১৪ সালের দশম ও ২০১৮ সালের একাদশ নির্বাচন প্রসঙ্গেও কথা বলেন
রেজাউল করীম। তার দৃষ্টিতে, ২০১৪ সালে দশম নির্বাচন সরকারদলীয় জোটের অংশগ্রহণে বিরোধী দলের অংশগ্রহণ ব্যতীত একতরফা নির্বাচন ছিল; তা আমরা যেমন জানি, দেশবাসী ও আন্তর্জাতিক মহলও অবগত রয়েছে। ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নামে প্রহসন হয়েছে, যা তৎকালীন প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ সবাই একবাক্যে বলছেন- এটি ছিল নিশি রাতের নির্বাচন; জনগণের ভোটাধিকার হরণের নির্বাচন। ওটাকে বাংলাদেশের সবচেয়ে নিকৃষ্ট প্রহসনের একটি নির্বাচন হিসেবে দেশবাসী বলছে।
দ্বাদশ নির্বাচনে দলের অবস্থান তুলে ধরে রেজাউল করীম বলেন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পরিবেশ তৈরির দাবি জানিয়ে দেশব্যাপী নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন করে আসছে। আমরা এসব দাবিতে গত ১ এপ্রিল ঢাকায় জাতীয় মহাসমাবেশ করে প্রত্যেক বিভাগে সমাবেশ করেছি। কয়েক দফা সংবাদ সম্মেলন করেছি। একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানে জনমত গঠনের লক্ষ্যে প্রতিদিনই আমরা কথা বলছি।
নির্বাচনকালীন সরকার ও নির্বাচন কমিশন (ইসি) বিষয়েও দলের অবস্থান জানান রেজাউল করীম। তিনি বলেন, নির্বাচনকালীন দলীয় সরকার নয়, আমরা জাতীয় সরকারের দাবি করেছি। জাতীয় সরকার গঠিত হলে তারা জনগণের দাবি অনুযায়ী গ্রহণযোগ্য একটি ইসি গঠন করবে বলে আমরা আশাবাদী।
বিএনপি ঘোষণা দিয়েছে, নির্বাচনের পর জাতীয় সরকার হবে। এ বিষয়ে নিজের দলের অবস্থান প্রসঙ্গে চরমোনাই পীর বলেন, ‘আমরা তো জাতীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছি। বিএনপির নির্বাচনপরবর্তী জাতীয় সরকারের বিষয়ে এখন কোনো মন্তব্য করতে চাই না।’ বিএনপির যুগপৎ আন্দোলনের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা স্বকীয়তা বজায় রেখে সামর্থ্য অনুযায়ী দেশের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় আন্দোলন করছি।’
আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির বাইরে গিয়ে একটি জোট গঠনের কথা ভাবছেন চরমোনাই পীর। এ বিষয়ে তিনি বলেন, এ তিন দলের বাইরে ইসলামী ও সমমনা দলসমূহকে সঙ্গে নিয়ে একটি ঐক্য গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
ভবিষ্যতে বিএনপি বা জাতীয় পার্টির সঙ্গে জোট গঠনের বিষয়ে চরমোনাই পীর বলেন, জাতীয় পার্টির সঙ্গে জোট গঠনের কোনো আলোচনা আমাদের দলীয় ফোরামে হয়নি। আর জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকেও কোনো আমন্ত্রণ আসেনি। বিএনপির সঙ্গেও কোনো কথা হয়নি।
জামায়াতের রাজনীতি নিয়ে রেজাউল করীম বলেন, তারা তো এখন নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতি করতে পারছে না। জামায়াত আগামীতে কী করবে, তা তাদেরই ঠিক করতে হবে।
আওয়ামী লীগ সরকারের মূল্যায়নে চরমোনাই পীর বলেন, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের ধারাবাহিক শাসনামলে মেগা উন্নয়ন প্রকল্পের নামে দুর্নীতির মহোৎসব ঘটেছে। দুর্নীতিবাজরা আঙুল ফুলে বটগাছ বনে গেছে। জেলা-উপজেলার সরকারদলীয় নেতারা হাজার হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি করে বিদেশে পাচার করেছে। দুঃশাসন ভোটাধিকার হরণ হয়েছে।
সরকার ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের মধ্যে দূরত্ব কমাতে সরকারকে কিছু পরামর্শ দেন চরমোনাই পীর। তিনি বলেন, জনগণের সমস্যা সমাধানে উদ্যোগ নেওয়া দরকার। জনগণের হয়ে বিরোধী রাজনৈতিক দল যেসব দাবি তোলে, তা মেনে নেওয়া উচিত।
ছোট ভাই মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীমের ব্যাংক হিসাব তলব করার বিষয়ে রেজাউল করীম বলেন, ‘একটি ফিন্যান্সিয়াল গোয়েন্দা সংস্থা ব্যাংকগুলোর কাছে হিসাব তলব করেছে বলে গণমাধ্যমে দেখেছি। দেশের মানুষ জানে ফয়জুল করীমের কোনো অবৈধ উপার্জন নেই। সরকার তাকে বিতর্কিত করতে উঠেপড়ে লেগেছে।’ তিনি বলেন, দেশের হাজার হাজার লুটেরা-দুর্নীতিবাজকে বাদ দিয়ে আমার ভাইয়ের ব্যাংক হিসাব তলব করা দুরভিসন্ধিমূলক।