বিরোধী দলগুলোকে বাইরে রেখে নীল নকশার নির্বাচন দেশবাসী করতে দেবে না -প্রিন্সিপাল হাফেজ মাওলানা ইউনুছ আহমাদ
সরকার নির্বাচনের নাটক মঞ্চস্থ করেছে বলে মন্তব্য করেছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব প্রিন্সিপাল হাফেজ মাওলানা ইউনুছ আহমাদ। তিনি বলেন, দেশবাসী স্বাধীনতার ৫২ বছর পর্যন্ত নির্বাচনের নামে নাটক পর্যবেক্ষণ করছে। বর্তমান সরকার নির্বাচনের নামে নাটক ২০১৪ এবং ২০১৮ সালেও করেছে। এবারও নতুন নাটক মঞ্চস্থ করছে। একতরফা তফসিল ঘোষণার পর সারাদেশে আওয়ামী লীগ আনন্দ মিছিলের নামে যে বার্তা দিয়েছে, তাতে এবারও নিশিরাতের নির্বাচনের রিয়ারসেল জাতি দেখতে পাবে। তিনি বলেন, ফরমায়েশি একতরফা নির্বাচনের তফসিল দেশবাসী প্রত্যাখান করেছে।
আজ রবিবার বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাব চত্বরে ইসলামী শ্রমিক আন্দোলন বাংলাদেশ ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আয়োজিত একতরফা অবৈধ তফসিল ঘোষণার প্রতিবাদ এবং শ্রমিকদের ন্যায্য দাবি বাস্তবায়নের দাবিতে আয়োজিত বিক্ষোভ মিছিলপূর্ব সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। বিক্ষোভ পূর্ব সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন, দলের সহকারি মহাসচিব মাওলানা মুহাম্মদ ইমতিয়াজ আলম, প্রচার ও দাওয়াহ সম্পাদক মাওলানা আহমদ আবদুল কাইয়ূম, ইসলামী শ্রমিক আন্দোলনের সিনিয়র সহ-সভাপতি আলহাজ্ব আব্দুর রহমান ও হাফেজ মাওলানা ছিদ্দিকুর রহমান, সেক্রেটারী জেনারেল মাওলানা খলিলুর রহমান, মুফতি মোস্তফা কামাল, মুহাম্মদ হারুন অর রশিদ, ডা. শহিদুল ইসলাম, মুহাম্মদ সবুজ মাল। ইসলামী শ্রমিক আন্দোলণ ঢাকা মহানগর দক্ষিণ সভাপতি হাফেজ শাহামাদত হোসেন প্রধানিয়ার সভাপতিত্বে এবং সেক্রেটারী মাওলানা শামসুল ইসলামের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন মুহাম্মদ বাবুল হোসেন, মুহাম্মদ আমিনুল হক, মাওলানা লিয়াকত আলীসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।
মাওলানা ইউনুছ আহমাদ বলেন, বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে বাইরে রেখে একতরফা নির্বাচনের নামে তামাশা এদেশে আর চলবে না। নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি না করে এবং নির্বাচনকালীন সরকারের রুপরেখার তৈরি না করে কোন নির্বাচন হতে পারে না। প্রধানমন্ত্রী সংলাপ প্রসঙ্গে বলছেন, ‘বিএনপির গুন্ডাদের সাথে কিসের সংলাপ, ওবায়দুল কাদের বলছেন, সংলাপের সময় নেই’ এভাবে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে বিরোধী দলবিহীন একতরফা নির্বাচন করে আজীবন ক্ষমতায় থাকার স্বপ্নসাধে বিভোর সরকার। তিনি বলেন, দেশের মুক্তিকামী মানুষের নেতা পীর সাহেব চরমোনাই সরকারকে এই সংকট উত্তরণের জন্য জাতীয় সরকার গঠনের যে পরামর্শ দিয়েছিলেন, তা মেনে নিলে আজ দেশ এই জ্বালাও-পোড়াও অবস্থায় নিপতিত হতো না। কিন্তু সরকার সেই পরামর্শ গ্রহণ করেনি। এখনও সুযোগ আছে, অনতিবিলম্বে বিরোধী দলগুলোর সাথে সংলাপের মাধ্যমে সমূহ সমস্যা সমাধানের। যদি সরকারের এখনো শুভবুদ্ধির উদয় না হয়, তাহলে আওয়ামীলীগ এই দেশের মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাবে। তিনি শ্রমিক হত্যার বিচার করতে হবে। শ্রমিকদের ন্যুনতম মজুরি ২৫ হাজার টাকা বাস্তবায়ন করতে হবে। তিনি নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণের দাবি জানিয়ে বলেন, সরকার সিন্ডিকেটের কাছে মাথানত করেছে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মাওলানা ইমতিয়াজ আলম বলেন, প্রহসনের একতরফা নির্বাচনের নীল নকশা বাস্তবায়ন করে সরকার দেশকে অনিবার্য ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিতে চাচ্ছে। গণদাবির বিরুদ্ধে তফসিল ঘোষণার মাধ্যমে সরকার দেশপ্রেমী জনগণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। দেশের জনসম্পৃক্ত দলগুলোর সাথে সংলাপ না করে সরকার একতরফা যে নির্বাচন আয়োজন করতে যাচ্ছে, তা স্বৈরাচারের নামান্তর। পাশাপাশি হাবিবুল আউয়ালের অথর্ব নির্বাচন কমিশন সেই স্বৈরাচারের সহযোগী। এই ভোটচোর সরকার অচিরেই দৃষ্টান্তমূলক পরিণতি বরণ করবে। তিনি শ্রমিকদের ন্যায্য দাবি মেনে নিতে সংশ্লিষ্টদের আহ্বান জানান। সেইসাথে শ্রমিকদের সর্বনিম্ম ২৫ হাজার টাকা বেতন ঘোষণার দাবি মেনে নিতে আহ্বান জানান।
মাওলানা আহমদ আবদুল কাইয়ূম বলেন, সরকার জনসমর্থন হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পরছে। গোয়েন্দা রিপোর্টে উঠে এসেছে, সুষ্ঠু নির্বাচন হলে সরকার ৩০টির বেশি আসন পাবে না। তাই তারা যেনতেন নির্বাচন দিয়ে পুনরায় ক্ষমতায় যেতে মরিয়া হয়ে উঠছে। তিনি আরও বলেণ, ইঙ্গ-মার্কিন সাম্রাজ্যবাদীর মদদে জারজরাষ্ট্র ইসরাইল ফিলিস্তিনে ইতিহাসের জঘন্যতম ববর্বরতা ও নিষ্ঠুরতা চালাচ্ছে। এগুলো বন্ধে বিশ্বমুসলিম নেতৃত্বকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
আলহাজ্ব আব্দুর রহমান বলেন, পীর সাহেব চরমোনাইর নেতৃত্বে জাতীয় সংলাপের মাধ্যমে সরকার পতনের যে কর্মসূচি আসবে, তাতে দেশের সর্বস্তরের মানুষ অংশগ্রহণ করবে, ইনশাআল্লাহ।
সমাবেশ শেষে একটি মিছিল প্রেসক্লাব, কদমফোয়ারা, পল্টন মোড় হয়ে বায়দুল বায়তুল মোকাররম উত্তর গেটে এসে মুনাজাতের মাধ্যমে শেষ হয়।