তিন সন্তানই থাকেন বিদেশে। করোনায় আক্রান্ত স্ত্রী মরে পড়ে ছিলেন ঘরে। তাঁকে দাফন তো দূরের কথা, করোনায় আক্রান্ত স্বামী নিজেও মুমূর্ষু অবস্থায় পড়ে ছিলেন বিছানায়। নিকট কোনো আত্মীয় পাশে না থাকায় ঘটনা কেউই জানতে পারেননি। এদিকে করোনায় আক্রান্ত পরিবার বলে প্রতিবেশীরাও এড়িয়ে চলছিলেন তাঁদের বাড়ি। এমন অবস্থায় ফোনে খবর পেয়ে তাঁদের উদ্ধার করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)। পরে ইউএনও মৃত নারীর লাশ দাফনের ব্যবস্থা করেন। আর অসুস্থ স্বামীকে হাসপাতালের করোনা ইউনিটে ভর্তি করান।
ঘটনাটি ঘটেছে আজ সোমবার সকালে চাঁদপুর শহরের ট্রাক রোড এলাকার খানবাড়ি এলাকায়। ওই দম্পতি হলেন শাহানাজ বেগম (৫৬) ও শাহ আলম ভূঁইয়া (৬৫)। স্বামী-স্ত্রী দুজনই কয়েক দিন ধরে করোনা পজিটিভ হয়ে বাড়িতে আইসোলেশনে ছিলেন। এর মধ্যে শাহানাজ বেগম আজ সকালে মারা যান। তাঁর স্বামী শাহ আলম ভূঁইয়া নিজেও শয্যাশায়ী হয়ে পড়ে ছিলেন। এ অবস্থায় কেউই তাঁদের কাছে যাচ্ছিলেন না। ফোন পেয়ে তাঁদের উদ্ধারে চাঁদপুর সদরের ইউএনও সানজিদা শাহনাজ এগিয়ে আসেন।
স্বামী-স্ত্রী দুজনই কয়েক দিন ধরে করোনা পজিটিভ হয়ে বাড়িতে আইসোলেশনে ছিলেন। এর মধ্যে শাহানাজ বেগম আজ সকালে মারা যান। তাঁর স্বামী শাহ আলম ভূঁইয়া নিজেও শয্যাশায়ী হয়ে পড়ে ছিলেন। এ অবস্থায় কেউই তাঁদের কাছে যাচ্ছিলেন না।
ইউএনও সানজিদা শাহনাজ বলেন, সকাল ১০টার দিকে শাহ আলম নামের একজন তাঁকে মুঠোফোনে ঘটনাটি জানান। শাহ আলম ওই দম্পতির প্রতিবেশী। খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তিনি সেখানে গিয়ে তাঁদের উদ্ধারের জন্য অ্যাম্বুলেন্স জোগাড়ের চেষ্টা করেন। কিন্তু কোথাও অ্যাম্বুলেন্স না পেয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকে দুলাল পাটোয়ারীর সহায়তায় আঞ্জুমান মুফিদুল ইনসানের একটি অ্যাম্বুলেন্স দিয়ে লাশটি স্বজনদের কাছে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। এতে ইসলামী আন্দোলনের স্বেচ্ছাসেবীরা সহায়তা করেন। আর করোনায় অসুস্থ শাহ আলমকে ২৫০ শয্যা চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালের করোনা ইউনিটে ভর্তির ব্যবস্থা করেন।
চাঁদপুরে ইতিমধ্যে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া শতাধিক লাশ দাফনকারী ইসলামী আন্দোলনের স্বেচ্ছাসেবী দলের প্রধান জয়নাল আবেদিন বলেন, চাঁদপুর সদর ইউএনও সানজিদা শাহনাজের মাধ্যমে তাঁরা খবর পেয়ে করোনায় মারা যাওয়া শাহনাজ বেগমের লাশটি উদ্ধার করে তাঁর বাবার বাড়ি শহরের ঢালীর ঘাট ভূঁইয়া বাড়িতে নিয়ে গিয়ে জানাজা শেষে দাফন করেন।
প্রতিবেশী শাহ আলম বলেন, ‘করোনায় আক্রান্ত ওই দম্পতির দুই ছেলে ও এক মেয়ে। দুই ছেলে দুবাই ও মেয়েটি ইতালিতে থাকেন। শাহ আলম ভূঁইয়া নিজেও দীর্ঘদিন দুবাইপ্রবাসী ছিলেন। ২০০৭ সালে তিনি দেশে ফিরে আসেন। নিকট কোনো আত্মীয় পাশে না থাকায় ওই দম্পতির এ অবস্থা কেউ জানতে পারেননি। আমি সাহস করে তাঁদের ঘরে গিয়ে এ অবস্থা দেখে সঙ্গে সঙ্গে সদরের ইউএনওকে খবর দিলে তিনি তাঁদের উদ্ধার করেন।’