৫৫/বি (৩য় তলা), পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০

ফোন : ০২-৯৫৬৭১৩০, ফ্যাক্স : ০২-৭১৬১০৮০

প্রতিষ্ঠার প্রেক্ষাপট

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ : প্রতিষ্ঠা পরিচিতি ও অগ্রযাত্রা

 

১৯৮৭ সালের ১৩ মার্চ গণমানুষের আস্থার প্রতিফলন ঘটাতে তিনি নেতৃত্ব গ্রহণ করলেন দিশেহারা একদল আল্লাহ পাগল মানুষের । বজ্রকণ্ঠে ঘোষণা করলেন একটি বিপ্রবী কাফেলার নাম “ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন” । শুধুমাত্র নাম শুনেই যে দলের লক্ষ্য- উদ্দেশ্য-কর্মপস্থা বোঝা যায়, দলের কোন বই পুস্তক পড়া ছাড়াই; এমন একটি কাফেলা এটি। হ্যাঁ, উপমহাদেশের এক অবিসংবাদিত নেতা চরমোনাই’র মরহুম পীর সাহেব সৈয়দ মুহাম্মদ ফজলুল করীম রহ. ঘোষণা করলেন অপ্রতিরোধ্য এক কাফেলার নাম। সুচিত হলো বাংলাদেশের ইসলামী আন্দোলনে এক নতুন ইতিহাসের । ১৯৮৭ সালের ১৩ মার্চ কিন্তু একদিনে হয়নি। এর নেপথ্যে রয়েছে অনেক না জানা ঘটনা। একদিকে সরলপ্রাণ মুসলমানদের ত্যাগ আর অপরদিকে কুটিলশ্রেণির অপতৎপরতা ও ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করেই সৃষ্টি হয়েছে ১৩ মার্চ।

প্রতিষ্ঠার পটভূমি
ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের প্রতিষ্ঠার ইতিহাস তালাশ করে জানা যায়, এর প্রাথমিক উদ্যোক্তা ছিলেন মাওলানা দেলোয়ার হোসাইন সাঈদী। মূলতঃ ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন প্রতিষ্ঠার পূর্বে মাওলানা সাঈদী এদেশের ওলামায়ে কেরাম ও পীর-মাশায়েখদের মাঝে ঐক্য গড়ে তোলার তৎপরতায় খুব সক্রিয় ছিলেন। সে সূত্রে হযরত পীর সাহেব চরমোনাই’র সাথে সাঈদী সাহেবের একটি ভাল সম্পর্ক ছিল। কারণ, হযরত পীর সাহেবও ওলামাদের ঐক্য প্রক্রিয়ায় সক্রিয় ও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করেছেন। এমনকি সর্বস্তরের ওলামাদের প্লাটফর্ম ইত্তেহাদুল-উম্মাহ’র মজলিসে সাদারাতের অন্যতম সদস্যও ছিলেন। ইত্তেহাদুল উম্মাহ্‌’র লক্ষ্য ছিল দেশের সর্বস্তরের ওলামায়ে কেরাম ও ইসলামী সংগঠনগুলোর মাঝে ঐক্য প্রতিষ্ঠা করে একটি ঐক্যবদ্ধ ইসলামী আন্দোলন গড়ে তোলা ।

একটা পর্যায়ে এসে ইত্তেহাদুল উম্মাহ্‌’র কার্যক্রম নেতাদের নিষ্ক্রীয়তায় বন্ধ হয়ে যায়। এমনি এক প্রেক্ষাপটে ইত্তেহাদুল উম্মাহ্‌’র অন্যতম সংগঠক ও নীতি নির্ধারক মাওলানা দেলোয়ার হোসাইন সাঈদী নতুনভাবে চিন্তা করতে লাগলেন । সবাইকে নিয়ে ব্যাপকভিত্তিক কিছু করা যায় কিনা- এনিয়ে আলোচনা শুরু করলেন। ১৯৮৭ সালের প্রথম দিকেই মাওলানা সাঈদী’র বিকল্প চিন্তা সক্রিয় রূপ পেল। তিনি এ নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কথা বললেন বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ মরহুম মাওলানা আবদুর রহীম রহ. ও মাওলানা ব্যারিস্টার কোরবান আলীর সাথে। যোগাযোগ হল চট্টগ্রামের প্রখ্যাত আলেম ও বুজুর্গ মরহুম মাওলানা আব্দুল আহাদ আল-মাদানী ও বাইতুশ শরফ-এর পীর মরহুম মাওলানা আব্দুল জব্বার সাহেবের সাথে। তত্কালীন যুব শিবিরের সভাপতি অধ্যাপক আহম্মদ আব্দুল কাদেরও এই প্রক্রিয়ায় সক্রিয়ভাবে জড়িত হলেন। সবাই অনুভব করলেন, ইসলামী শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য ব্যাপকভিত্তিক ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তোলা দরকার । প্রাথমিক আলোচনাতেই মরহুম মাওলানা আবদুর রহীম এ আন্দোলনে ব্যাপক গণসম্পৃক্ততার লক্ষ্যে হযরত পীর সাহেব চরমোনাই’র অপরিহার্যতার কথা তোলেন। অন্যরাও এ ব্যাপারে একমত হন। ইতোমধ্যে ১০ জানুয়ারি ইসলামী এক্য প্রক্রিয়ার উদ্যোক্তাদের আহ্বানেই বন্দরনগরী চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত হয় লক্ষ জনতার মিছিল। জনতার আশাতীত আগ্রহ ।

উদ্যোক্তাদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী হযরত পীর সাহেব চরমোনাই’র উত্তরবঙ্গ সফরকালীন তার সাথে আলোচনার জন্য চলে যান মাওলানা ব্যারিস্টার কোরবান আলী । ব্যারিস্টার সাহেব হযরত পীর সাহেবকে ঐক্য প্রক্রিয়া সম্পর্কে অবগত করেন এবং তার মতামত জানতে চান। হযরত পীর সাহেব এ ব্যাপারে তাৎক্ষণিক কিছু না বলে ঢাকায় এসে আলোচনা করবেন বলে জানান ।

এ প্রক্রিয়ার উদ্যোক্তাদের সাথে বসলেন। অন্যরা যেহেতু ঐক্যের ব্যাপারে আগেই একমত হয়েছিলেন, এদের মধ্যে খেলাফত আন্দোলনের শায়খুল হাদীস আল্লামা আজিজুল হক এবং মরহুম মাওলানা আব্দুল গাফ্ফারও ছিলেন। অতএব চরমোনাই”র দিকে । হযরত পীর সাহেব এঁক্যের ব্যাপারে তাঁর আগ্রহের কথা জানিয়ে অতীত তিক্ত অভিজ্ঞতার আলোকে বললেন, এখানে আমরা যারা আজ একত্রে বসেছি, আমার সন্দেহ হয়, আমরাই এক্যবদ্ধ থাকতে পারব কি-না । হযরত পীর সাহেবের এ কথা শুনে সাঈদী সাহেব অত্যন্ত দৃঢ়তার সাথে সবার সামনে কোরআন শরীফ তুলে ধরে বলেন, যদি কারো মনে সংশয় থাকে তা হলে প্রয়োজনে আমরা কোরআন স্পর্শ করে শপথ করব। সাঈদী সাহেবের এই আবেগময় উক্তিতে উপস্থিতি সকলেই সংশয়াতীতভাবে উজ্জীবিত হন। স্থির হল সকল ছোট বড় ইসলামী দল ও দেশবরেণ্য ওলামা মাশায়েখ পীর-বুযুর্গদের সমন্বয়ে ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের নামে ইসলামী হুকুমত প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ইস্যুভিত্তিক এক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।

সিদ্ধান্ত হয় ৩ মার্চ সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে দেশবাসীর সামনে এই ঐক্যবদ্ধ ইসলামী আন্দোলনের অভিপ্রায় প্রকাশ করা হবে।

মাওলানা দেলোয়ার হোসাইন সাঈদীর উদ্যোগ, মরহুম মাওলানা আব্দুর রহীম সাহেবের প্রচেষ্টা, মরহুম মাওলানা আব্দুল আহাদ আল মাদানী ও বায়তুশ শরফের পীর মরহুম মাওলানা আব্দুল জব্বার সাহেবের আগ্রহ, ব্যারিষ্টার কোরবান আলী ও অধ্যাপক আহম্মদ আবদুল কাদেরের শ্রমসাধনা, শাইখুল হাদীস মাওলানা আজিজুল হক ও মরহুম মাওলানা আব্দুল গাফফার সাহেবের সহযোগিতা এবং মরহুম পীর সাহেব চরমোনাই*র সম্মতিতে জন্ম নিল “ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন” । ইতিহাসে শুরু হলো আরো একটি ইসলামী আন্দোলনের অভিযাত্রা ।

সংবাদ সম্মেলনে ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের ঘোষণা
৩ মার্চ, ১৯৮৭ একটি প্রতিক্ষিত দিন। আজ আত্মপ্রকাশ ঘটতে যাচ্ছে, একটি কাঙিখিত ইসলামী আন্দোলনের । বাংলাদেশের ইসলামী রাজনীতির ইতিহাসে সূচনা হতে যাচ্ছে এক নতুন অধ্যায়ের। ইসলামপ্রেমী জনতার রুদ্ধশ্বাস অপেক্ষা। শেষ হল বুঝি অধীর অপেক্ষার অনেকগুলো প্রহর। কিন্তু একি! শুভ দিনটির প্রথম প্রহরেই ছড়িয়ে পড়ল অশুভ সংবাদ । এঁক্যবদ্ধ ইসলামী আন্দোলনের উদ্যোক্তা মাওলানা দেলোয়ার হোসাইন সাঈদী দেশ ছেড়ে উধাও। তিনি নাকি ইতোমধ্যেই পাড়ি জমিয়েছেন মধ্যপ্রাচ্যে ৷ এক্য প্রক্রিয়ায় সংশ্লিষ্টদের কাছে সংবাদটি অবিশ্বাস্য মনে হল। তারা ভাবলেন, এটা বোধ হয় প্রতিপক্ষের নিছক অপপ্রচার। কিন্তু বিস্ময়করভাবে অপপ্রচারটি সত্য সংবাদ হিসেবে প্রমাণিত হল। দেশের শীর্ষ ওলামা বুজুর্গদের অবাক করে গেলেন। তার দেশ ত্যাগের কারণ হিসেবে মায়ের চিকিৎসার কথা ছাপা হয়েছে পত্রিকায়। এসব ক্ষেত্রে এ জাতীয় অজুহাত পেশ করার যেহেতু একটা রেওয়াজ রয়েছে, তাই এর চর্চা করতে গিয়েও সাঈদীর উপদেষ্টাগণ এমন জঘন্য অসত্যেরও আশ্রয় নিলেন।

যা হোক, সাঈদী সাহেব যখন সরে পড়েছেন, সেহেতু তার অবস্থান এখন পরিস্কার। কোরআন স্পর্শযুক্ত শপথ আলোচনা করেও এখন আর লাভ নেই। কারণ, সাঈদী এখন নাগালের বাইরে । সাংবাদিক সম্মেলনের কি হবে এ নিয়েই এখন সবার ভাবনা । সিদ্ধান্ত ছিল মাওলানা সাঈদীই সংবাদ সম্মেলনের ঘোষণাপত্র পাঠ করবেন। তার অনুপস্থিতিতে সিদ্ধান্ত হল, হযরত পীর সাহেব চরমোনাই ঘোষণাপত্র পাঠ করবেন। তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত মোতাবেক হযরত পীর সাহেব চরমোনাই ১৯৮৭ সনের ৩ মার্চ ঢাকাস্থ অনুষ্ঠিত এক জনাকীর্ণ সাংবাদিক সম্মেলনে ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের আত্মপ্রকাশ উপলক্ষে এক এতিহাসিক ঘোষণাপত্র পাঠ করেন। শুরু হয় ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের আনুষ্ঠানিক যাত্রা । সুচনাতে যে সব সংগঠনের সমন্বয়ে শাসনতন্ত্র আন্দোলন যাত্রা শুরু করেছিল, সেগুলো হলো- মরহুম মাওলানা আবদুর রহীমের নেতৃত্বে ইসলামী এঁক্য আন্দোলন, শায়খুল হাদীস আল্লামা আজিজুল হকের খেলাফত আন্দোলন, অধ্যাপক আহম্মদ আব্দুল কাদের ও ডঃ আবিদুর রহমানের নেতৃত্বে ইসলামী যুব শিবির, মরহুম মাওলানা আব্দুল জব্বারের নেতৃত্বে আঙ্গুমানে ইত্তেহাদ বাংলাদেশ, হযরত পীর সাহেব চরমোনাই’র নেতৃত্বে বাংলাদেশ মুজাহিদ কমিটি। এছাড়া আওলাদে রসূল মাওলানা আবদুল আহাদ মাদানী তার অসংখ্য অনুসারী নিয়ে শাসনতন্ত্র আন্দোলনে প্রতিনিধিত্ব করেছেন। সাংবাদিক সম্মেলনের আগ পর্যন্ত মাওলানা দেলোয়ার হোসাইন সাঈদী প্রতিনিধিত করেছেন ইত্তেহাদুল উম্মাহর নেতা হিসেবে। নোয়াপাড়ার পীর সাহেব খাজা সাঈদ শাহ সাহেবও তার হাজারো ভক্ত-মুরীদ নিয়ে শুরু থেকেই শাসনতন্ত্র আন্দোলনের সাথে ছিলেন। মেজর (অবঃ) এম. এ. জলিলের নেতৃতে জাতীয় মুক্তি আন্দোলন শাসনতন্ত্র আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত না হলেও প্রক্রিয়াধীন ছিল। কিন্তু মেজর জলিল হঠাৎ করে বিদেশ চলে যাওয়ায় এবং তিনি ইন্তেকাল করায় পরবর্তীতে জাতীয় মুক্তি আন্দোলন নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে।

৩ মার্চের সংবাদ সম্মেলন থেকেই নেতৃবৃন্দ ১৩ মার্চ মতিঝিল শাপলা চত্বরে ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের উদ্যোগে জাতীয় মহা সমাবেশের ডাক দেন। সেটিই ছিল ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের নামে সর্বপ্রথম মাঠ পর্যায়ের কর্মসূচী । ১৩ মার্চের সমাবেশ ছিল জনসম্মুখে ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের আত্মপ্রকাশ উপলক্ষে একটি এতিহাসিক শো-ডাউন। এরই মধ্যে আন্দোলনের ফাণ্ড গঠনের জন্য সারাদেশে ১০০০ টাকা থেকে ৫ টাকা পর্যস্ত বিভিন্ন মানের কুপন ছাড়া হয়। যেহেতু ১৩ মার্চের সমাবেশ এবং তহবিল সংগ্রহের সিদ্ধান্ত ৩ মার্চের আগেই হয়েছিল, সেহেতু কুপনে মাওলানা সাঈদীর স্বাক্ষরও ছিল। যে ছয়জন শীর্ষ নেতার স্বাক্ষরযুক্ত কুপনের মাধ্যমে ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের প্রাথমিক তহবিল সংগ্রহের কাজ শুরু হয়, তারা হলেন, (১) মাওলানা দেলোয়ার হোসাইন সাঈদী (২) মাওলানা আব্দুর রহীম (৩) শায়খুল হাদীস মাওলানা আজিজুল হক (৪) মাওলানা আব্দুল জব্বার (৫) মাওলানা সৈয়দ মুহাম্মদ ফজলুল করীম ও (৬) মাওলানা সৈয়দ আব্দুল আহাদ আল মাদানী ।

এর মধ্যে ৩ মার্চের আগেই সরে পড়লেন মাওলানা সাঈদী । বাকীরা ১৩ মার্চের মহাসমাবেশ বাস্তবায়নে ব্যাপক গণ-সংযোগ শুরু করলেন। শুরু হল ইসলামী জনতার মাঝে এক নব জাগরণের আমেজ।

রক্তাক্ত রাজপথ
এতিহাসিক ১৩ মার্চ। উত্তাল ঢাকা নগরী। স্বৈরশাহীর রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে হিংস্র প্রতিরোধ ব্যুহ ভেদ করে জনতার স্রোত ধেয়ে চলল শাপলা চত্বর অভিমুখে । দিশেহারা হয়ে যায় স্বৈরশাহী। পেটোয়া বাহিনী আগেই প্রস্তুত ছিল সমাবেশ ঠেকাতে । আগের দিনই পুলিশ সমাবেশের মঞ্চ ভেঙ্গে ফেলেছিল। গ্রেফতার করেছিল আন্দোলনের ৮ জন কর্মীকে । অতএব পরিস্থিতি ছিল উত্তপ্ত। পুলিশ ঘিরে রেখেছে গোটা মতিঝিল ও দৈনিক বাংলা এলাকা । উপরের কঠোর নির্দেশ; কোন রকম সমাবেশ করতে দেবে না তারা আজ। স্বৈর সরকার ইতোমধ্যে টের পেয়ে গেছে ইসলামী জনতার এই স্রোত সরকার বিরোধী আন্দোলনকে আরো গতিময় করে অপ্রতিরোধ্য করে তুলবে । ইসলামের পক্ষে একটি গণ-অভ্যুত্থানের আশংকায় শংকিত হয়ে পড়েছিল একটি মহল। অতএব যে কোন মূল্যে ঠেকাতে হবে এই মহা শক্তিকে । মাথা সোজা করে দাঁড়াতে দেয়া যাবে না এ মিশনকে।

লাখো ইসলামী জনতার উপর চালানো হয় হিংস্র বর্বরতা। বায়তুল মোকাররমের পবিত্র অঙ্গণে আশ্রয় নিয়েও রেহাই পায়নি ঈমানদার জনতা । বেপরোয়া লাঠিচার্জ, টিয়ারগ্যাস আর বুলেটের মহাযজ্ঞ পেটোয়ারা। জাতীয় বায়তুন্নাহ রঞ্জিত হল আহতের ছোপ ছোপ রক্তে। সেদিন শাপলা চত্বরে সমাবেশ করতে দেয়নি ওরা। জাতীয় প্রেসক্লাবের অভ্যন্তরে প্রবেশ করেও সেদিন আন্দোলনের নেতা কর্মীদের উপর ঝাপিয়ে পড়েছে পুলিশ। এ রক্তঝরা অধ্যায়ের মধ্য দিয়ে সূচনা হল ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের অভিযাত্রা ।

সংগ্রাম মুখর পথচলা
একটি প্রতিকূল ও সংগ্রামমুখর অবস্থার মধ্য দিয়ে যাত্রা শুরু করল ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন । এ আন্দোলনে বেশ কয়েকটি ইসলামী সংগঠন ও দেশের উল্লেখযোগ্য পীর-মাশায়েখের সমাহার ঘটিয়ে শুরু থেকেই সর্বত্র ব্যাপক সাড়া জাগাতে সক্ষম হল। ক্রমেই ইসলামী জনতার আগ্রহ বৃদ্ধি পেতে থাকল । কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় হল; ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন গোটা দেশে মজবুত সাংগঠনিক ভিত্তি গড়ে তোলার আগেই বিভিন্নভাবে বাধাগ্রস্ত হতে থাকল। এরই মধ্যে আন্দোলনের প্রধান স্তন্ত মাওলানা আব্দুর রহীম ইন্তেকাল করলেন (ইন্রানিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। হযরতের মৃত্যুর পর নির্বাচন প্রশ্নে ইসলামী এঁক্য আন্দোলন দ্বিধা বিভক্ত হয়ে পড়ল। ব্যারিস্টার মাওলানা কোরবান আলীর নেতৃতে একটি অংশ ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনে থেকে গেল, আর হাফেজ হাবিবুর রহমানের নেতৃত্বে একটি অংশ আন্দোলন থেকে বেরিয়ে গেল। আন্দোলনের অপর দুই শরীক খেলাফত আন্দোলন (আ-গা) ও ইসলামী যুব শিবিরের তৎপরতায়ও এঁক্য বিরোধী পরিবেশ সৃষ্টি হতে লাগল ।

ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন ছিল একটি যৌথ নেতৃত্ব ভিত্তিক প্লাটফর্ম আন্দোলনে শরিক সকল সংগঠনের প্রধানেরই পর্যায়ক্রমে শাসনতন্ত্র আন্দোলনের প্রধান মুখপাত্র হওয়ার সুযোগ ছিল। শুরুতে শাইখুল হাদীস আল্লামা আজিজুল হকই ছিলেন শাসনতন্ত্র আন্দোলনের প্রধান মুখপাত্র ।

কিন্ত দুঃখজনক বাস্তবতা হলো, নিয়ম অনুযায়ী মুখপাত্রের দায়িত্ব শাইখুল হাদীস সাহেবের কাছ থেকে হস্তান্তর হওয়ার পরই খেলাফত আন্দোলন ও যুবশিবির শাসনতন্ত্র আন্দোলনের কার্যক্রমে অনেকটা নিষ্ক্রিয়ভাব দেখাতে লাগল। এক পর্যায়ে এ দু’টি সংগঠন আলাদা প্রাটফর্ম গড়ে তোলার তৎপরতা শুরু করল। তারা তাদের নতুন মিশনে ইসলামী ঐক্য আন্দোলনকেও শরীক করতে চেষ্টা করল। কিন্তু প্রাথমিক আলোচনার পরও এঁক্য আন্দোলন তাদের সাথে যায়নি ।

শেষ পর্যন্ত ১৯৮৯-এর ১২ অক্টোবর খেলাফত আন্দোলন (আ-গা) ও যুবশিবিরের এক যৌথ বৈঠকে খেলাফত মজলিস নামে নতুন দল গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত হয়। পরবর্তীতে এক কনভেনশনের মাধ্যমে যুব শিবির ও খেলাফত আন্দোলন একীভূত হয়ে খেলাফত মজলিস হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। এঁক্য বিরোধী পরিবেশ তীব্রতর হতে থাকে। ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের পাশাপাশি খেলাফত মসলিসও প্রকাশ্যে রাজনৈতিক প্রোগ্রাম শুরু করে। যদিও সিদ্ধান্ত ছিল, সকল সংগঠনের সাংগঠনিক কার্যক্রম আলাদা আলাদা হলেও প্রকাশ্য রাজনৈতিক কর্মসূচীগুলো ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের ব্যানারেই হবে। কিন্তু দেখা গেল, খেলাফত মজলিস ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনকে পাশ কাটিয়ে প্রকাশ্য রাজনৈতিক তৎপরতায় নেমে পড়ল।

১৯৯০ সনে ইসলামী যুব শিবিরের তৎকালীন ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র শিবির ইসলামী ছাত্র মজলিস নাম ধারন করে খেলাফত মজলিসের অনুগামী ছাত্র সংগঠনে রূপ নিল। খেলাফত মজলিস চূড়ান্তভাবে ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের ব্যাপারে রহস্যজনকভাবে অনাগ্রহী হয়ে উঠল।

এমন একটি প্রেক্ষাপটে ১৯৯০ এর জুলাইতে ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের পূর্ণাঙ্গ মজলিসে শুরা ও আমেলার অধিবেশনে সর্বসম্মতিক্রমে পীর সাহেব চরমোনাই দ্বিতীয়বারের মতো ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের মুখপাত্র নির্বাচিত হন। মজলিসে শুরা ও মজলিসে খাসের সেই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন শাইখুল হাদীস আল্লামা সাহেব মাওলানা আব্দুল জব্বার, যশোর নোয়াপাড়ার পীর সাহেব মাওলানা খাজা সাঈদ শাহ, হযরত পীর সাহেব চরমোনাই রহ., মাওলানা আবদুল গাফ্ফার, মাওলানা মুহিউদ্দিন খান, ব্যারিস্টার মাওলানা কোরবান আলী, সাবেক মন্ত্রী মাওলানা ইসহাক, সাবেক সচিব নূর মোহাম্মদ আকন, অধ্যক্ষ মাসুদ খান, অধ্যাপক আখতার ফারুক, হযরত মাওলানা আব্দুর রশিদ (পীর সাহেব বরগুনা), ডাক্তার মুখতার হোসাইন, অধ্যাপক এ.টি.এম হেমায়েত উদ্দিন, অধ্যাপক আহম্মদ আব্দুল কাদের, এ. আর. এম আব্দুল মতিন, মাওলানা আবুল কালাম, মাওলানা এমদাদুল হক আড়াইহাজারী, মাওলানা আবুল খায়ের বিক্রমপুরী প্রমুখ নেতৃবৃন্দ। উল্লেখ্য, এরই মধ্যে চট্টগ্রামের মাওলানা সৈয়দ আব্দুল আহাদ আল মাদানী ইন্তেকাল করেন।

মূলতঃ তখন থেকেই শুরু হয় ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনকে একটি মজবুত সাংগঠনিক ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠা করার কার্যকরী তৎপরতা । হযরত পীর সাহেব চরমোনাই রহ.-এর বিচক্ষণ ও বলিষ্ঠ নেতৃত্বে জেলা থানা এমনকি গ্রাম মহল্লা পর্যায়েও গড়ে উঠতে থাকে ই.শা. আন্দোলনের সাংগঠনিক ভিত্তি। এরই মাঝে তীব্র গণ-আন্দোলনের মাধ্যমে এরশাদ সরকারের পতন ঘটে । শুরু তোড়জোড়। ইসলামী সংগঠনগুলো এঁক্যবদ্ধতভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহনের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে । জামায়াতে ইসলামী গোপনে সমঝোতা গড়ে তোলে বড় দল বি.এন.পি.-এর সাথে। যেহেতু ই.শা. আন্দোলনের বাইরেও কয়েকটি ইসলামী দল, যথা- খেলাফত আন্দোলন, জমিয়তে ওলামায়ে ইসলাম, নেজামে ইসলাম, ফরায়েজী জামায়াত রয়েছে, সেহেতু আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ মনে করলেন সবাইকে নিয়েই নির্বাচনী জোট গড়ে তোলা দরকার । নির্বাচনকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠল ইসলামী এক্যজোট। ইসলামী এঁক্যজোট গড়ে উঠার পর খেলাফত মজলিস আর শাসনতন্ত্র আন্দোলনে করল না। কিন্তু পরিতাপের বিষয় হল, পরবর্তীতে শাইখুল হাদীস সাহেব এক্যজোটের এঁক্যও ধরে রাখতে পারলেন না। বাধ্য হয়ে হযরত পীর সাহেব চরমোনাইকে ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের হাল ধরতে হল। আলোচনা সংক্ষেপ করার তাগিদে এখানে অনেক ঘটনা প্রবাহই উল্লেখ করা গেল না।

১৯৮৭ থেকে ১৯৯১ এ চার বছর ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের তৎপরতা বেশিরভাগই মিটিং মিছিল সমাবেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। বৃহত্তর বরিশাল ও খুলনা অঞ্চলেই শুধু তৃণমূল পর্যায়ে কিছু সাংগঠনিক তপ্ত চলেছে। র খুলনা অঞ্চলে কিছু জেলী থানা শাখা গঠিত হয়েছিল। এ সময় আন্দোলনের উল্লেখযোগ্য কর্মসূচী ছিল ‘৮৮-র মার্চে দেশব্যাপী শাসনতন্ত্র দিবস পালন। এ উপলক্ষ্যে ঢাকায় বিশাল সমাবেশ- মিছিল, যাত্রীবাহী ইরানী বিমানে মার্কিনী ক্ষেপনান্ত্র হামলায় ২৯০ জনকে নৃশংসভাবে হত্যার বাদে ব্যাপক ভ, সৌদি হজ্জনীতি ও কোটা প্রথা বাতিলের দাবিতে ঢাকায় সাংবাদিক সম্মেলন ও বিক্ষোভ, এ কারণে হযরত পীর সাহেব ভিসা দেয়নি, যার প্রতিক্রিয়া সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছিল এবং ঢাকায় তৌহিদী জনতা সৌদী দূতাবাস ঘেরাও করেছিল ‘৮৮-র বন্যা দুর্গতদের মাঝে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ, মার্কিন হামলায় দুটি লিবিয়ান বিমান ধ্বংসের প্রতিবাদে সালমান রুশদির ফাসির দাবিতে গোটা দেশে প্রচন্ড বিক্ষোভ, রুশদী বিরোধী বিক্ষোভে পুলিশী হামলায় ঢাকায় ইশা আন্দোলনের অর্ধশতাধিক কর্মী আহত। ‘৮৮-তে রূশদী বিরোধী আন্দোলনে বাংলাদেশের উত্তাল ইসলামী জনতাকে মূলতঃ ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনই নেতৃত্ দিয়েছে।

১৯৮৯-এর সবচেয়ে বড় ঘটনা হল দেশের শীর্ষ ওলামা-মাশায়েখদের উদ্দেশে হযরত পীর সাহেব চরমোনাই’র এতিহাসিক উদ্বোধনী ভাষণ। হযরত পীর সাহেবের পক্ষ থেকেই সম্মেলনের আহ্বান করা হয়েছিল। সে বছরই ভারতের বাবরী মসজিদ প্রাঙ্গণে রাম মন্দিরের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপনের প্রতিবাদে ইশা আন্দোলন সর্বপ্রথম প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ করে।

১৯৯০-এর মার্চে গণসমাবেশ ছিল সে বছরের ৎ সমাবেশ। সে বছর আন্দোলন ব্যাপক প্রতিবাদ বিক্ষোভ করে। উপসাগরীয় সংকট ও মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন আগ্রাসনের বিরুদ্ধেও ইশা আন্দোলন বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করে। ভারতীয় বিশ্বকোষে মহানবীর (সঃ) প্রতি কটুক্তির প্রতিবাদে ইশা আন্দোলন সংবাদ সম্মেলন ও ভারতীয় দূতাবাস অভিমুখী মিছিল ও স্মারকলিপি প্রদান করে।

১৯৯০-এর স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনেও ইশা আন্দোলন সক্রিয় ভূমিকা পালন করে।

নবউদ্যমে ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন
এ কথা নির্দিধায় বলা যায়, ১৯৯১ তে এসে ই.শা. আন্দোলন নবজন্ম লাভ করে। আন্দোলনের মুখপাত্র হযরত প্রতি পুরোপুরি মনোনিবেশ করলেন। ই. শা. আন্দোলনের প্রতি এক সময়ের উদ্যোক্তা ও শরীকদের অবজ্ঞা তিনি চ্যালেঞ্জ হিসেবে গ্রহণ করলেন । ই. শা. আন্দোলনকে কারা সলিমুল্লাহ এতিমখানায় পরিণত করতে চেয়েছিল, তিনি তা ভাল করেই টের পেয়ে গেলেন। তিনি প্রচন্ড রকম সংকল্পবদ্ধ হলেন আন্দোলনের ব্যাপারে । নজর দিলেন সাংগঠনিক মজবুতির উপর। সাংগঠনিক সফর শুরু করলেন জেলা, থানা, শহর, বন্দরে । গভীর চিন্তায় মগ্ন হলেন আন্দোলনকে কিভাবে ধরে রাখা যায়। ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব সৃষ্টির ব্যাপারে তার উদ্বেগের শেষ নেই। রাত-দিন সাথে। শেষ পর্যন্ত আন্দোলন ধরে রাখা এবং ভবিষ্যতে নেতৃত্ সৃষ্টির লক্ষ্যে ছাত্র সংগঠন গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নেন। নতুনভাবে উজ্জিবীত হয়ে উঠে আন্দোলনের গোটা দেহ। প্রবল উৎসাহ উদ্দীপনা আর ভবিষ্যত পরিকল্পনা নিয়ে ১৯৯১ এর ২৩ আগষ্ট প্রতিষ্ঠা লাভ করে ই. শা. আন্দোলনের সহায়ক সংগঠন ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলন । অভাবনীয় সাড়া পড়ে গোটা দেশে। প্রাণ-চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয় গোটা আন্দোলনে | আন্দোলনের মাঝে থেকেও যারা এর ভবিষ্যত নিয়ে দ্বিধান্বিত ছিল, দ্বিধা-সংশয় কেটে যায় তাদের। সবার মাঝে একই তাড়া- এবার শুধু এগিয়ে যাওয়ার পালা; হলও তাই। ১৯৯১ থেকে ২০০৮, ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন এখন একটি মজবুত ইসলামী রাজনৈতিক শক্তি। এর শিকড় চলে গেছে তৃণমূল পর্যায়ের গণ-মানুষের অনেক গভীরে । ইসলামের মূল শক্তি দেশের ওলামা সমাজের কাছেও আজ ই. শা. আন্দোলন সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য ও জনপ্রিয় । নতুন প্রজন্ম একমাত্র আপোষহীন আদর্শিক সংগঠন বলতে এখন ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনকেই বুঝে ।

স্বকীয় বৈশিষ্ট্যে ইশা. আন্দোলন
১৯৪৭ পরবর্তী এ উপমহাদেশের ইসলামী সংগঠনগুলোর ইতিহাস মোটেও গৌরবের নয়। শিরদাড়া সোজা করে কোন ইসলামী সংগঠনই গণ-আকাঙ্খার যথার্থ প্রতিফলন ঘটাতে পারেনি। নিজেদের মাঝে বিচ্ছিন্নতা তো ছিলই, তারপরও কোন সংগঠনেরই লক্ষ্যে পৌছার স্বতন্ত্র কোন গতিপথ ছিল না। অবিভক্ত ভারতবর্ষে বড় দলের পিছনে চলার যে নীতি চালু হয়েছিল, স্বাধীন পাকিস্তান সৃষ্টির পরও সে নীতির চর্চা শেষ হয়নি৷ যে কারণে নেজামে ইসলামও জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম উলামাসমৃদ্ধ দল হওয়া সত্বেও ইসলামের পক্ষে কোন বিকল্প স্রোতধারা সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়নি। ঈমানদার জনতার প্রবল চাপের মুখে ১৯৫১ সালে যদিও সকল মত ও পথের ইসলামী দল ও ওলামা মিলে ২২ দফা ভিত্তিক ইসলামী শাসনতন্ত্র রচনা করে এক্যবদ্ধ হয়েছিলেন, কিন্তু কোন সংগঠনেরই ব্যাপক গণ-ভিত্তি ও সাংগঠনিক মজবুতি না থাকায় এক্যের চেয়ে ওলামা হযরতরা শাসক শ্রেণীর সাথে দর কষাকষিতেই ছিলেন অধিক তৎপর । যে সুযোগটি পুরোপুরি গ্রহণ করেছে তৎকালীন গাদ্দার মুসলিমলীগ । মূলতঃ তখন গাদ্দার মুসলিম লীগের কাছে ইসলাম ও ইনসাফ আশা করাই ছিল সবচেয়ে বড় ভুল। যার চরম খেসারত দিতে হয়েছে ‘৭০ এর নির্বাচন ও ‘৭১ এর ঘটনা প্রবাহের মধ্য দিয়ে। জামায়াতে ইসলামীর অবস্থান কোন কালেই পরিষ্কার ছিল না। বাংলাদেশ সৃষ্টির ব্যাপারে যেমন জামায়াতের ভূমিকা জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়, তেমনি পাকিস্তান অর্জনের ব্যাপারেও জামায়াতের ভূমিকা বিতর্কহীন ও স্বচ্ছ নয়।

স্বাধীনতা পরবর্তী চরম প্রতিকূল পরিস্থিতিতে সুচতুর গোলাম আযম- নিজামীরা চানক্য নীতি গ্রহণ করে। তুলনামূলক পরহে্যগার ও সরল লোকগুলোকে সামনে দিয়ে তারা আড়ালে-আবডালে এবং দেশ দেশাত্তরে পাড়ি জমায় । প্রথমে মরহুম মাওলানা আব্দুর রহীম সাহেব জামায়াতের হাল ধরে গোপনে সংগঠিত করতে লাগলেন। “৭৫ পরবর্তীতে কিছুটা অনুকূল পরিবেশে জামায়াত নেতারা বাংলাদেশের রাজনীতিতে পুনর্বাসিত হওয়ার জন্য এবং ওলামা সমাজের কাছে গ্রহণযোগ্য হওয়ার জন্য আই.ডি.এল এর ছদ্মাবরণে সওয়ার হল প্রখ্যাত আলেমে দ্বীন খতীবে আজম হযরত মাওলানা সিদ্দিক আহম্মদ র.- এর ঘাড়ের। মূলতঃ দেশের বাইরে বসে অধ্যাপক গোলাম আযমই সবকিছুর কলকাঠি নাড়ছিলেন। মাওলানা আবদুর রহীম ও খতীবে আজমকে ব্যবহার করে অধ্যাপক সাহেব শুধু ক্রাইসিস মুহুর্তটা পার করেছেন। অনুকূল পরিবেশ ফিরে এলে দিলেন। ১৯৭৮ এর একটি চমৎকার অনুকূল পরিবেশে গোলাম আযম সাহেব দেশে ফিরে এসে জামায়াতের স্টিয়ারিং হাতে নিয়ে একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রক হয়ে যান। গোলাম আযম সাহেবের চালাকি সচেতন ওলামাগণের বুঝতে সমস্যা হয়নি। জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর হযরত হাফেজ্জি হুজুর রহ. যখন প্রকাশ্য রাজনীতিতে নেমে আসেন, তখন একমাত্র জামায়াতে ইসলামী ছাড়া এক পর্যায়ে দেশের সকল ছোট-বড় ইসলামী দল ও ইসলামী ব্যক্তিত্ব হযরত হাফেজ্জির নেতৃত্বে শামিল হয়।

’৮১ এর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জামায়াত অংশগ্রহণ না করলেও হযরত হাফেজ্জি হুজুরকে সমর্থন না দিয়ে বিএনপিকে সমর্থন দেয়। এতে জামায়াতের ব্যাপারে হযরত হাফেজ্জি হুজুরের ধারণা আরো খারাপ হয়ে যায়। আরো দূরত্ব সৃষ্টি হয় জামায়াতের সাথে হক্কানী উলামায়ে কিরামের।

জামায়াতের রাজনৈতিক চরিত্র যে ধূর্ততায় পূর্ণ তা আবারো ফুটে উঠে ‘৮৬-এর জাতীয় নির্বাচনে । যে বিএনপির সাথে হাত ধরাধরি করে জামায়াত এতদিন চলে আসছিল, সেই বিএনপির সঙ্গ ত্যাগ করে এরশাদের ডাকে আওয়ামী লীগের সাথে জামায়াতও নির্বাচনে অংশগ্রহণ করল। অনেকের ধারণা, জামায়াতই হযরত হাফেজ্জী হুজুরের খেলাফত আন্দোলনে ভাঙ্গণ সৃষ্টি করেছে। এ ধারণাটি বিশ্বাসযোগ্য মনে হয় হযরত হাফেজ্জীর এক সময়ের একান্ত সহচর মেজর জলিলের একটি উক্তি থেকে । তার লেখা “এ সার্চ ফর আইডেনটিটি” বইতে এক জায়গায় তিনি জামায়াত প্রসঙ্গে বলেছেন, “কুরআন ও সুন্নাহ’র আলোকে জামায়াত প্রকৃত অর্থে কেবল একটি অনৈসলামিক দলই নয়, এক অর্থে যে কোন ধর্মনিরপেক্ষ শক্তির চেয়েও বেশি বিশ্বাসঘাতক । সংক্ষেপে জামায়াত হচ্ছে সাম্রাজ্যবাদ ও সৌদি রাজতত্ত্রের বীজ থেকে সৃষ্ট এক বর্বর গোষ্ঠী।”

এক পর্যায়ে মেজর জলিল আরো লেখেন, “জামায়াত সমর্থিত কিছু ইসলামী ফ্রন্ট রয়েছে, এই সব ফন্টের প্রত্যক্ষ স্থার্থে প্রকৃত ইসলামী আন্দোলনকে পথন্রষ্ট করা এবং এভাবে বাংলাদেশে যে কোন প্রকৃত ইসলামী আন্দোলনকে স্যাবোটাজ করা ।”

জামায়াতের ব্যাপারে মেজর জলিলের উপরিউক্ত মূল্যায়ন খুবই তাৎপর্যপূর্ণ । মেজর জলিল বিপুল গণ-জোয়ার পরবর্তী খেলাফত আন্দোলনের ভাঙ্গন শুধু কাছে থেকে নয়, বরং ভিতরে থেকে দেখেছেন। তাঁর দীর্ঘ রাজনৈতিক অভিজ্ঞতায় সম্ভবতঃ বুঝতে কষ্ট হয়নি কাজটি কারা করেছে। সুতরাং খেলাফত আন্দোলন প্রসঙ্গটিই নয়, এক্যমঞ্চের বুলি কপচানেওয়ালা এই গোলাম আযম সাহেবরাই ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের উদ্যোক্তা সাঈদী সাহেবকে চাপের মুখে বিদেশ পাঠিয়ে দিয়ে এঁক্যবদ্ধ আন্দোলনের পিঠে ছুরিকাঘাত করেছিলেন। এরাই ওলামাদের এরক্যপ্রয়াসী একটি সংগঠন ‘ইত্তেহাদুল উম্মাহ্‌’ প্রসঙ্গে বিবিসি’র সাক্ষাতকারে বলেছেন, “এটা জামায়াতেরই একটি অঙ্গ সংগঠন।’ জামায়াত নেতাদের এই উক্তির পরিণতিতেই মুলতঃ ইত্তেহাদুল উম্মাহ লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে। আসলে জামায়াতের এক্য বিরোধী তৎপরতা ও আচরণের ফিরিস্তি এত দীর্ঘ যে, এ বিষয়েই একটি গবেষণাধর্মী জার্নাল তৈরী করা যায়। তারপরও জামায়াতের প্রবীণ নেতা গোলাম আযম প্রয়াসের গল্প ।

সর্বশেষ ইসলামী অঙ্গণের এক্য প্রয়াসকে গলা টিপে হত্যা করে গোলাম আযম সাহেবই বেগম জিয়ার কাছে উপস্থিত হয়েছিলেন। অথচ সে সময় ইসলামী মহলে একটি বৃহত্তর এঁক্য প্রয়াস চলছিল বলে বাতাসে খবর বেরুচ্ছিল।

অপরাপর সংগঠন ও ব্যক্তি নিয়ে আলোচনা করা আজকের প্রসঙ্গ নয়। তবুও আলোচ্য বিষয়টিকে পূর্ণাঙ্গ করার চেষ্টাতেই অনেকগুলো বিষয়ের অবতারণা হল। এ দীর্ঘ আলোচনায় অনেক হতাশার সংবাদ যেমন আছে, তেমনি আছে আশাম্বিত হওয়ার খোশখবরীও। আর সেই খোশখবরীটি হল ইসলামী এক্য প্রচেষ্টার সর্বশেষ নির্যাস “ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন’ । মহান রাব্বুল আলামীনের অশেষ মেহেরবাণীতে ই.শা. আন্দোলন দীর্ঘ দেড় যুগের নিরলস পথ পরিক্রমায় অসংখ্য ঘাত-প্রতিঘাত পেরিয়ে এদেশের ইসলাম প্রত্যাশী গণ-মানুষ ও ছাত্র-জনতার জন্য ইসলামী আন্দোলনের একটি স্বতন্ত্র গতিপথ স্পষ্টভাবে নির্ধাাণ করতে সক্ষম হয়েছে। অপরাপর ইসলামী সংগঠনগুলোর মাঝে যখন আদর্শের প্রচণ্ড আকাল, ভুলে ভরা পলিসি, পাওয়ার পলিটিক্সের অন্দরমহলে ইতি- উতির নির্লজ্জ প্রবণতা, ঠিক সেই মুহূর্তে ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন তার বিঘোষিত নীতি ও আপোষহীন বলিষ্ঠ পলিসির উপর অটল থেকে এখনো পর্যন্ত ইসলামী বিপ্রবের সীরাতে মোস্তাকিম থেকে এদিক-সেদিক হওয়ার কসরত করেনি।

ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন এবং আন্দোলনের আমীর হযরত পীর সাহেব চরমোনাই রহ. নীতি ও আদর্শের উপর অটল থেকে আপোষহীন ধারায় অবিচল থাকায় বারংবার কোয়ালিটি অনেকসময় একেক ধরণের তোহমত প্রচারে প্রয়াসী হয়। আসলে তারা যে অন্যদেরকেও একেক সময় একেক কোয়ালিটির মনে হচ্ছে, এটা হয়তো খেয়ালই করেন না।

আদায় করতে হয়, ই.শা. আন্দোলন এবং পীর সাহেব চরমোনাই যদি অবিকৃতভাবে অবিচল না থাকতেন, তাহলে এদেশের ইসলামী জনতা হয়তো নিকট ভবিষ্যতে ইসলামী আন্দোলন ও সংগঠনকে সেক্যুলার আন্দোলন ও সংগঠন থেকে আলাদাই করতে পারত না। আজ এত বিচ্ছিন্নতা ও অসচ্ছতার মাঝেও কমপক্ষে এতটুকু সান্তনা ও নির্ভরতার আশ্বাস ইশা. আন্দোলনে খুঁজে পাওয়া যায় বলেই এখনো জাতির একটি বিশাল ঈমানদার অংশ এদেশে ইসলামী আন্দোলনের ভবিষ্যত নিয়ে আশাবাদি। আশাবাদি বলেই শত অপপ্রচার, চতুর্মুখি প্রোপাগাপ্ডা ও ষড়যন্ত্র চলমান থাকা সত্তেও ই.শা. আন্দোলন প্রতিদিনই দু’কদম না হয় এক কদম এগুচ্ছেই।

গোটা পরিবেশ পরিস্থিতির প্রতিকূলে অবস্থান করেও শুধু দ্বীনি আদর্শের উপর অবিচল থাকাতে ই.শা. আন্দোলন ক্রমান্বয়ে এদেশের ঈমানদার গণ-মানুষের কাছে আজ একটি জনপ্রিয় সংগঠনে পরিণত হয়েছে। বিগত দিনের প্রতিটি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ইস্যুতে ই.শা. আন্দোলনের অবস্থান ও ভূমিকা ছিল অত্যন্ত স্পষ্ট । ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন ইসলামী শাসন পাশাপাশি ক্ষমতাসীন জালিম তুলেছে নির্যাতিত মুসলিম উম্মাহর পক্ষে। এদেশে আল্লাহ, রাসূল সা. ও কুরআনের বিরুদ্ধে যারা কথা বলেছে, ই.শা. আন্দোলন তাদের বিরুদ্ধেই রাজপথে ঝাঁপিয়ে পড়েছে সর্বাগ্রে।

প্রকৃতপক্ষে ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন আগাগোড়াই একটি এক্যপ্রয়াসী আন্দোলনকামী শক্তি। অতীত এবং বর্তমানের সবগুলো ঘটনা প্রবাহই প্রমাণ করে দ্বীন ও দেশের স্বার্থে ইশা আন্দোলন এঁক্যের ব্যাপারে সবচেয়ে বেশী আন্তরিক ও আগ্রহী । এর জন্মই হয়েছে এক্যের দর্শনের উপর। তবে এ কথাও সত্য, এক্যের ফাঁদে পড়ে ই.শা. আন্দোলন নিজের অস্তিত্ব বিনাশ করতে বা ইসলামী আন্দোলনের স্বতন্ত্র গতিপথ থেকে সরে দাঁড়াতে মোটেও আগ্রহী নয় ।

ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের অগ্রগতি এবং যে কোন জাতীয় কর্মসূচী সফলে এ সংগঠনের এবং পীর সাহেব চরমোনাইর উপস্থিতি অবধারিত হয়ে যাওয়ার কারণে সবচেয়ে বেশী বেকায়দায় পড়ল জামায়াত। কারণ ইতোপূর্বে জামায়াত বিরোধী শক্তিশালী কোন নেতৃত্ব বা সংগঠন প্রতিষ্ঠা লাভ করতে ব্যর্থ হয়েছে এবং জামায়াত নেতৃত্বের ধারণা ছিল তারা বাংলাদেশে একাই ইসলামী আন্দোলনের প্রতিনিধিত্ব করবেন। এরকম দিবাস্বগ্ন ভেঙ্গে যাওয়ায় জামায়াত এবং তাদের অনুগামী কিছু ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের কর্মীবাহিনীকে বিভ্রান্ত করার লক্ষ্যে নানামুখী অপপ্রচারে লিগ হল। এসবের মধ্যে উল্লেখযোগ্য অপপ্রচার হল- এটি ব্যক্তি কেন্দ্রিক সংগঠন । অতএব তিনি ইন্তেকাল করলেই এর সমাপ্তি ঘটবে। এ অপপ্রচারটি নতুন কর্মীদের কাছে অনেকটা বিশ্বাসযোগ্য ছিল এজন্য যে, ইতোপূর্বে হাফেজ্জী হুজুর রহ.-এর সংগঠনের এরকম পরিণতি নিকট অতীতেই ঘটেছিল। আমরা যারা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতাম যে, এমনটি ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের বেলায় ঘটবে না, তারাও জোড় গলায় মানুষকে বলতে দ্বিধায় পড়তাম, কারণ এটি বিশ্বাসযোগ্য করানোর জন্য উপযুক্ত সময় পর্যস্ত অপেক্ষা ছাড়া গত্যন্তর ছিল না। কিন্তু গত ২০০৬ সালের ২৫ নভেম্বরে মাওলানা সৈয়দ মুহাম্মদ ফজলুল করীম পীর সাহেব চরমোনাই ইন্তেকালের পর আজ প্রায় দেড় বছর অতিবাহিত হয়েছে। ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন আল্লাহর রহমতে নতুন নেতৃত্বের অধীনে অতীতের চাইতে আরো জোড়ালো অবস্থানে তার জায়গা করে নিয়ে সমালোচকদের অপপ্রচারের দাঁতভাঙ্গা জবাব দিয়েছে। সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে ইশা আন্দোলন ব্যক্তি কেন্দ্রিক নয় বরং আদর্শ কেন্দ্রিক একটি গণমূৃখী সংগঠন । ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন আজ এমন অবস্থানে পৌঁছেছে যে, দেশে জরুরী অবস্থায় যখন ইসলামবিরোধী ব্যক্তিতু ও দল পত্রিকার পাতায় সীমাবদ্ধ ছিল। তখন নিয়মতান্ত্রিক রাজপথের আন্দোলনে নেতৃত্‌ দিয়ে বর্তমান পীর সাহেব চরমোনাই জাতিকে ইসলাম বিরোধী ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে এক্যবদ্ধ করেছেন। দেশ ও জাতির যে কোন সংকটকালে আজ পীর সাহেব চরমোনাই’র নেতৃত্বাধীন ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের নাম অবধারিতভাবেই উঠে আসে। শুধু ইসলামী সংগঠন হিসেবেই নয়; নিয়মতান্ত্রিক, আপোষহীন, দেশপ্রেমিক গণমৃখী দল হিসাবে এ সংগঠন আজ সুপরিচিত। অনেক ইসলামী সংগঠনের নেতারা নির্বাচনকে সামনে রেখে যখন সে সময় ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন ইসলামী নীতি-আদর্শ ও হালাল-হারাম ভেবে থাকে শংকিত।

২০০১-এর নির্বাচনে জাতীয় স্বার্থের ঠুনকো দোহাই দিয়ে যখন অনেক ওলামা ও ইসলামী দল নারী নেতৃত্বের অধীনে জোটবদ্ধ নির্বাচনে অংশ নিল তখনও ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন ছিল স্বকীয় অবস্থানে। ওলামায়ে কিরামের অনেক কটুক্তিও শুনতে হয়েছিল এজন্য । কিন্তু আজ প্রমাণিত হয়ছে যে, নারী নেতৃত্ব-পর্দাকে বিসর্জন দেয়া হয়েছিল যে ইসলাম ও দেশের দোহাই দিয়ে তা ছিল ভুল। ইসলামের কোন লাভ সেখানে হয়নি বরং অর্জিত হয়েছে কিছু ব্যক্তির অর্থনৈতিক ও সামাজিক লাভ । আজ অনেকেই স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছে যে, ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন সঠিক অবস্থানে ছিল। কারণ অপরাপর ইসলামী নেতারা যেখানে নারী নেতৃত্ব এবং হিজাবকে সাহেব চরমোনাই ভিন্ন অবস্থানে না থাকলে মানুষকে ভবিষ্যতে বোঝানোই যেত না, পর্দা করা ফরয আর নারী নেতৃত্‌ অসঙ্গত।

ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন যে স্বতন্ত্র গতিপথ নির্ধারণ করতে সক্ষম হয়েছে, এ পথ ধরেই পৌছানো সম্ভব ইসলামী খেলাফতের সেই স্বপ্নের সমাজে । আর এজন্য প্রয়োজন সাহাবায়ে কিরামের অনুসরণে ত্যাগের দৃষ্টান্ত স্থাপন। আমরা যদি ত্যাগ-কুরবানীর সর্বোচ্চ দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারি, তবেই সফল হতে পারে আমাদের হৃদয়ের স্পন্দন এ আন্দোলন। সূচিত হতে পারে নতুন দিগন্তের । কায়েম হতে পারে ইসলামী খেলাফত ।

আল্লাহ্‌ তায়ালা আমাদেরকে এ মহতি কাফেলায় খুলুসিয়াতের সাথে জুড়ে থাকার তৌফিক দান করুন, আমীন।

 

লেখক
১। সাবেক কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ

২। সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি
ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশ

Scroll to Top

সদস্য ফরম

নিচের ফরমটি পূরণ করে প্রাথমিক সদস্য হোন

small_c_popup.png

প্রশ্ন করার জন্য নিচের ফরমটি পূরণ করে পাঠিয়ে দিন